মা তোমাকে ভালোবাসি

বড় হয়ে শুনেছি আমার জন্ম হয়েছিল ঠিক ভোর হয় এমন সময়ে। ২৩ বছর আগের সেই অন্ধকারের গহ্বরে আটকা পড়ে প্রসব বেদনায় জর্জরিত মায়ের বদনখানি দেখতে না ফেলেও আজও উপলব্ধি করতে পারি আমাকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামে মায়ের যুদ্ধের কথা। অভাবের সংসারে সুখের অনুসন্ধানে আটপৌরে জীবনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই জানেন বেঁচে থাকার সংগ্রাম কতটা বৈচিত্র্যময়।

নানা অজুহাত কিংবা পাওয়ার নিবেদনে কত কষ্ট দিয়েছি, আজ তা বোধগম্য হচ্ছে। মায়ের শরীর এখন আর আগের মতো নেই, স্থিরতা আঁকড়ে ধরেছে। মা, তোমার গত হয়ে যাওয়া সময় হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারব না। তবে সুযোগ দাও নিজেকে উজাড় করে ভালোবাসব তোমায়।

বসন্তের পালাবদলের সাক্ষী হয়ে তোমার সমবয়সী কতক নারীকে সহাস্যে কত আমুদে আহ্লাদে দেখেছ। মা, তোমার মনে পড়ে যেদিন বাবার ভালো রোজগার হতো, তখন তিনি বড় কুমড়া নিয়ে আসতেন। আর তুমি মোটা মোটা রুটি বানিয়ে দিতে, আমরা কত আনন্দে তা খেতাম। বড় মা বলতেন, প্রায় বাবা নাকি তোমাকে নানা অজুহাতে মানসিক নির্যাতন করতেন, তুমি ধৈর্য ধারণ করতে আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে। নানাভাই বহুবার চলে যেতে বলেছিল, কিন্তু তুমি যাওনি।

মা, ঝড়ের রাত্রিতে তুমি খুবই ভয় পেতে; নড়বড়ে ঘরটায় কিছু হলেই তো আমাদের রক্ষা নেই। আঁচলের তলে আমাদের মাথা গুঁজিয়ে রাখতে। তবে বোধের অভাবে হয়তো বুঝতাম না, কল্পনাও করতাম না মায়েরা কেমন হয়।

আজ তুমি ঠিকমতো হাঁটতে পারছ না, খেতে পারছ না আগের মতো। আজ উপলব্ধি হলেও অনেক কিছুই সংকোচে বলতে পারি না। পত্রপত্রিকায় মা দিবসের নানা আয়োজন জানতে পারি। তবু কেন জানি বলতে পারি না, মা তোমাকে ভালোবাসি। আজ নতুন স্বপ্নে বুক বেঁধেছি তোমার প্রতি কতক পঙ্‌ক্তি সাজাব বলে—
‘মা,
তুমি এত রহস্যময়ী কেন?
কেনোই বা অতিসাধারণ নারী?
জরাজীর্ণ দেহাবরণ,
রক্তশূন্য দেহ!
কেন?
অনাহারে, অর্ধাহারে জীবন অতিবাহিত করা,
শত বকুনি শোনা, কতই অসহায় তুমি!
তুমি,
সব পারো কেন?
মানুষের সমাজে তুমি তো মানুষ নও—
কারও চোখে,
গৃহজাত বা নিভৃতচারী।
মা,
শুধু আজ বলো,
আর কত বসন্ত কাটলে তুমি মানুষ হবে,
মানুষ তোমায় ভালোবাসবে?
আচ্ছা মা,
কতটুকু ভালোবাসা দিলে তোমার জুতার সম হব?
আর মানুষের মাঝে তুমি ভালো থাকবে?
মা,
মমতাময়ী, আমার স্বপ্নচারিণী মা,
শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
মা তুমি বেঁচে থেকো শতকাল, তোমার যতনে নিজেকে বিলিয়ে দেব সহাস্যে।’