ভালো বিতার্কিক হতে হলে

যুক্তির মাধ্যমে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করছেন এক বিতার্কিকছবি: অদ্বিত আল নাফিউ

বিতর্কে জয়লাভ করলেই কি তিনি ভালো বিতার্কিক, নাকি যিনি যুক্তি দিয়ে ভালো বিতর্ক করেন তিনি? প্রতিনিয়ত অনুশীলন ও কিছু কৌশল রপ্ত করার মাধ্যমে ভালো বিতার্কিক হওয়া যায়। ভালো বিতার্কিক হতে হলে যা জরুরি—

নিয়মিত পড়াশোনা

বিতর্ক মানেই যুক্তি। যুক্তি তখনই সুন্দর ও সার্থক হবে, যখন সেখানে জ্ঞান থাকবে। আর জ্ঞানের পূর্বশর্ত পড়ালেখা । কম পড়ুয়া অনেক বিতার্কিককে বিতর্কে জিততে দেখলেও, যাঁর পড়াশোনার গভীরতা বেশি, পরবর্তী সময়ে তিনি ভালো বিতার্কিকের স্বীকৃতি পাননি, তেমনটা দেখিনি। যে বিতার্কিক তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যানের ব্যবহার, উক্তি, উদ্ধৃতির ব্যবহার করে তথ্যবহুল যুক্তি দিতে পারবেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই ভালো বিতার্কিক। সমসাময়িক সব বিষয়ে জ্ঞান থাকাটাও জরুরি। চোখের সামনে যা পাওয়া যাবে, সব পড়ে ফেলতে হবে।

স্ক্রিপ্ট তৈরি ও সম্পাদনার দক্ষতা

একজন বিতার্কিক পাঁচ মিনিট যে কথাগুলো বলবেন, তার লিখিত রূপই হলো স্ক্রিপ্ট বা পাণ্ডুলিপি। স্ক্রিপ্ট বিতার্কিককে ধারাবাহিক, সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ বক্তব্য দিতে সহায়তা করে। তবে স্ক্রিপ্টনির্ভরতা ভালো বিতার্কিকের যোগ্যতা নয়। ভালো স্ক্রিপ্ট লেখা ও সম্পাদনার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। আকর্ষণীয় ও চমকপ্রদ শব্দ ও বাক্য দিয়ে স্ক্রিপ্ট শুরু করতে হবে। কোনো তথ্য বাদ দিতে হবে, কোনো পয়েন্ট ছোট করে অন্য পয়েন্টের সঙ্গে জুড়ে দিতে হবে, কোনো পয়েন্ট রেখে দিতে হবে, কোনো পয়েন্ট সংলাপ আকারে বলতে হবে, কোনো পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ হলে সেটিকে টেনে আরও তথ্য মিশিয়ে বড় করতে হবে।

যুক্তির নির্মাণ-বিনির্মাণ

নিজের অকাট্য যুক্তি ও প্রতিপক্ষের যুক্তিকে ঘায়েল করাই বিতর্কের মূল উদ্দেশ্য। বিতার্কিক যে তত্ত্ব দেন, তত্ত্বকে সমর্থন করেন, যে তথ্য পরিবেশন করেন, অথবা তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে তত্ত্বের উল্লেখ করেন এবং এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাঁর মতো করে যে উদাহরণ দেন—এসব মিলেই যুক্তি। প্রত্যেক বিতার্কিকের যুক্তি তৈরির কৌশল আলাদা। একই বিষয়ে ভিন্ন বিতার্কিক ভিন্নভাবে তার যুক্তি উপস্থাপন করেন। এভাবে ভাবলে যুক্তি সাজানো সহজ হবে।

বিতর্কের কাঠামো বিনির্মাণ ও সমন্বয়

বিতর্কের শুরু কেমন হবে, কোন যুক্তি কখন বলব বা কোন যুক্তির পর কোন যুক্তি উপস্থাপন করব, এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরাসরি প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন দিয়ে শুরু করব, নাকি নিজের যুক্তি দিয়ে তাঁদের যুক্তিগুলোকে ভুল প্রমাণ করে বক্তব্য শুরু করব—এটা হলো বিতর্কের ফ্রেমিং। বিষয় হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাবতে হবে কীভাবে ও কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি উপস্থাপন করব। এখানে কে কোনটা বা কতটুকু বলবেন, এটাই বিতর্কের কাঠামো।

বাচনিক দক্ষতা ও উপস্থাপনা

সেরা বিতার্কিক সবাই একেকজন কণ্ঠের জাদুকর। বিতার্কিক প্রমিত উচ্চারণ ও উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজেকে সেরা প্রমাণ করেন। বাচনিক উৎকর্ষতা হলো উচ্চারণের শুদ্ধতা, বাচনভঙ্গির কুশলতা, কণ্ঠস্বরের কারুকাজ। উচ্চারণ ও উপস্থাপনার পূর্ণ দক্ষতা ছাড়া সেরা বিতার্কিক হওয়া সম্ভব নয়। আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে, স্পষ্ট বলতে হবে।

সময়জ্ঞান

একজন বিতার্কিক সময়কে নিজের মনের সঙ্গে বেঁধে নেবেন। চার মিনিটের সতর্ক সংকেতের মধ্যে মূল বক্তব্য দেওয়া এবং পাঁচ মিনিটের চূড়ান্ত সংকেতের মধ্যে মূল কথা বলে ফেলার কৌশল রপ্ত করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের বেশি বা কম বলা দুটিই দোষের।

শুনতে হবে, দেখতে হবে, অংশগ্রহণ করতে হবে

ভালো বক্তা হতে হলে ভালো শ্রোতা হতে হবে। প্রতিপক্ষের কোথায় ভুল আছে, সেটি ধরিয়ে দিতে পারলে অর্ধেক বিতর্ক জেতা যায়।

বিতার্কিকের অন্যান্য গুণাবলি

প্রশ্ন করতে হবে, প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে যুক্তি খণ্ডন ও বিশ্লেষণ করতে হবে। রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

বিতার্কিককে অবশ্যই পরিহার করতে হবে

অবমাননাকর, পক্ষপাতমূলক ও অশালীন শব্দ। সাধু ও চলিত ভাষায় কথা বলা, বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণ করা যাবে না। খুব বেশি নড়াচড়া, আঙুল উঁচিয়ে কথা বলা, একই স্বরে কথা বলা যাবে না।

১৮তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন ও সাবেক সহসভাপতি, ডিইউডিএস