বিমানবন্দরটিতে মাত্র ৫০ জন পাইলট বিমান ওড়াতে পারেন

এই বিমানবন্দরে কেবল দিনের বেলা বিমান ওঠানামা করেছবি: সংগৃহীত

হিমালয়ের দেশ ভুটানের দুই পাশে ভারত ও চীন। দেশটির ৯৭ শতাংশ এলাকা পাহাড়ি। রাজধানী থিম্পু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৭১০ ফুট (২ হাজার ৩৫০ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত। আর পারুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৩৮২ ফুট উঁচুতে।

ভুটানের চারটি বিমানবন্দরের মধ্যে একটি পারু ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। পাইলটদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিমানবন্দরের মধ্যে এটি অন্যতম। সি ক্যাটাগরির এই বিমানবন্দরে বিমান চালানোর জন্য পাইলটের বিশেষ প্রশিক্ষণ লাগে। কোনো রাডার ছাড়াই ম্যানুয়ালি তাঁদের বিমান অবতরণ করতে হয়।

ভুটানের রাষ্ট্রীয় বিমান ড্রুক এয়ারে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলট ক্যাপ্টেন ছিমি দর্জি। পারু বিমানবন্দর কঠিন, তবে ভয়ংকর নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পারু বিমানবন্দরের আশপাশের জমি সম্পর্কে জানা পাইলটের জন্য কঠিন। অল্প একটু ভুল হলেই দেখা গেল কারও বাড়িতে বিমান অবতরণ হয়ে গেল! তাই পাইলটকে স্থানীয় এলাকা সম্পর্কে ধারণা ও পাহাড়ে বিমান চালানোতে দক্ষ হতে হবে।’

এই বিমানবন্দরে কেবল দিনের বেলা বিমান ওঠানামা করে। রাডার না থাকায় এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাতে বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকে। বর্ষা মৌসুমে (জুন-আগস্ট) বজ্রপাতের কারণে মাঝেমধ্যে দিনের বেলায়ও বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকে। ক্যাপ্টেন ছিমি দর্জি বলেন, ‘পাইলটের প্রশিক্ষণ কেবল বিমান ওড়ানোতেই সীমাবদ্ধ নয়; কখন বিমান ওড়ানো যাবে না, সেটাও জানতে হয়। কখন উড্ডয়নের জন্য নিরাপদ সময় নয়, সেটা তাঁকে জানতে হবে।’

পারু বিমানবন্দরের চারদিক পাহাড়বেষ্টিত। মাত্র ছোট একটি টার্মিনাল রয়েছে। রানওয়ের দৈর্ঘ্য মাত্র ৭ হাজার ৪৩১ ফুট। দুই পাশে দুটি উঁচু পাহাড় রয়েছে। যার কারণে পাইলটরা যখন অবতরণের জন্য প্রস্তুত হন, কেবল তখনই আকাশ থেকে রানওয়ে দেখতে পান। মাত্র এক-দুই মাইল দূর থেকে রানওয়ে দেখতে পান। সেকেন্ডের মধ্যে তাঁদের অবতরণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

পারু ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট
ছবি: সংগৃহীত

বিমানবন্দরটিতে মাত্র একটি ভিওআর রয়েছে। যার মাধ্যমে পাইলটরা দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকেন। কোনো রাডার বা আইএলএস পদ্ধতি নেই। পাইলটদের দৃশ্যমানভাবে বিমানটি ম্যানুয়ালি উড়তে ও অবতরণ করাতে হয়। মাত্র ৫০ জন পাইলটের এখানে বিমান চালানোর অনুমতি রয়েছে।

এই বিমানবন্দরে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে গেলে পাইলটের অবশ্যই কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা এবং বিমান পরিবহন সার্টিফিকেট (এটিসি) থাকতে হবে। এই ১ হাজার ৫০০ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ ঘণ্টা পাহাড়ের মধ্যে বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা হতে হবে। প্রশিক্ষণের সময় অন্তত ৩০বার এই বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরণ করতে পারলেই কেবল লাইসেন্স পান।

সূত্র: সিএনএন, সিম্পল ফ্লায়িং