‘ওঙ্কার’ উপন্যাস নিয়ে ‘বাঙলা’ নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন গুণী পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন। ২০০৬ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।
বাংলা ভাষায় জাদু আছে। এই ভাষা উচ্চারিত হলে নিকানো উঠোনে রৌদ্র ঝরে। বারান্দায় লাগে জ্যোৎস্নার চন্দন। অন্ধ বাউলের একতারা বেজে ওঠে। অন্ধজনে আলো পায়। বোবা মানুষ কথা বলে। এই ভাষা উচ্চারিত হলে কাননে কুসুমকলি ফোটে। হৃদয়ে পদ্ম বিকশিত হয়। অন্তরের আলো জ্বলে ওঠে। কিন্তু এই ভাষার চারণ-বিচারণ ক্ষেত্র কোনো অলৌকিক সত্তা দিয়ে গড়ে ওঠা নয়। কঠিন–কঠোর বাস্তবের অনেক রক্তঝরা ইতিহাসের পথ ধরে উঠে এসেছে। এই লড়াইয়ের সাক্ষীদাতা দগ্ধ–জীবনপোড়া কিছু মানুষ, অনেক ঘাত-প্রতিঘাতে বিদগ্ধ লেখক হয়ে উঠে ইতিহাসের আলো জ্বেলে রেখেছেন। তেমনই এক কথাশিল্পী চট্টগ্রামের আহমদ ছফা। তাঁর ক্ষুদ্র একটি উপন্যাস ‘ওঙ্কার’ ভাষা ও দেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট ধারণ করে রেখেছে।
‘ওঙ্কার’ হলো অন্তরাত্মার প্রতিধ্বনি। সব ধ্বনির সৃষ্টির মূল। আমাদের ব্রহ্মতালু ছুঁয়ে যে পরম পবিত্র শব্দের উৎপত্তি, মাটির শেকড়ে তার রসদ।//বাহান্নর রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারের রক্তঝরা আন্দোলনের পথ ধরে উঠে আসা একটা শোষিত-নিপীড়িত জাতির মার খেতে খেতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা, সেখান থেকে মুক্তির, শিরদাঁড়া শক্ত করে ঘুরে দাঁড়ানোর, উনসত্তরের তীব্র গণ–আন্দোলন, আইয়ুব খানের পুলিশের গুলিতে আসাদের মৃত্যু, রক্তকে শপথে পরিণত করে দিকে দিকে মুখর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ, একটি পরিবার, কিছু মানুষ এবং একটি বোবা মেয়ের লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে ধ্বনিত হয়েছে ওঙ্কার।
এই ‘ওঙ্কার’ উপন্যাস নিয়ে ‘বাঙলা’ নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন গুণী পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন। ২০০৬ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। সূচনায় ‘আমার সুখ–দুঃখ, আমি বাংলার/ওঙ্কার, বাংলার ওঙ্কার’ শীর্ষক মিল্টন খন্দকার ও বিপুল ভট্টাচার্যর গানটি ভালো লাগে। কাহিনির অন্তিম পরিণতিতে চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যের সঙ্গেও গানটি সুন্দর মিলে যায়। চলচ্চিত্রের শুরুতে আমরা দেখি, বাড়িতে পিয়ন এসে পাকিস্তান সরকারের ডাকটিকিট লাগানো চিঠি ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। যে কথক নায়কের জবানিতে এই উপন্যাস ডালপালা মেলেছে, এরপর আমরা দেখতে পাই যে সেই নায়ক শহর থেকে গ্রামে ফিরছে।
এই উপন্যাসের নায়ক একসময়ের প্রবল প্রতিপত্তিসম্পন্ন গ্রামের হাঁক–ডাক করা এক জমিদার তথা তালুকদার পরিবারের সন্তান। নায়কের বাবার দেহে পূর্বপুরুষের সামন্ততন্ত্রের রক্ত। বাবা একদিকে পরম ধার্মিক। ধর্মের বিধান অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন, আবার উগ্র কড়া মেজাজের আগ্রাসী মানুষ। যার একডাকে বাঘে–হরিণে একঘাটে জল খায়। তার এক অতি ঘনিষ্ঠ মোক্তার, এক চোখ কানা বলে ‘কানা মোক্তার’ বলে পরিচিত, সঙ্গ দেওয়ার নাম করে একের পর এক মামলা–মোকদ্দমায় তাকে জড়িয়ে ফেলে।
নায়ক ছোটবেলায় দেখেছে, যেদিন বাবার মোকদ্দমার তারিখ পড়ত, সেদিন বাড়িতে সকাল থেকেই ধর্মকথা পাঠের আসর বসত। খাসি জবাই করে অনেক লোকের খাওয়াদাওয়ার বিপুল আয়োজন হতো। আবার এই উৎসবের মেজাজে নিজেদের জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে বাবাকে নামাজ পড়তে দেখে ছোট্ট বালক বুবুকে প্রশ্ন করত, ‘বাবা ঘুমাচ্ছে না নামাজ পড়ছে রে?’ বুবু ছোট ভাইকে ‘চুপ কর বেয়াদব’ বলে এড়িয়ে যেত।
জমিদারের কাছে মামলা-মোকদ্দমা একধরনের হার-জিত খেলা। কিছুতেই তিনি হারতে চান না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সবকিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হতেন। তখন লড়াইয়ের তেজ আরও বেড়ে যেত। অন্যদিকে কানা মোক্তার ছিল পাশা খেলার মূল ধূর্ত শকুনি। পাকিস্তান সরকারের কূট রাজনীতির রক্ত তার শিরায়। সে একধরনের ঠগ, দেশ–গ্রামের সাধারণ মানুষের বাঙালি জাতিসত্তার বিরোধী, রাজাকার। কূটকৌশলে জমিদারকে একের পর এক মামলায় হারিয়ে সব সম্পত্তি, এমনকি ভিটেবাড়ি পর্যন্ত দখল করে নেয়।
আজ নায়কের বাবা কানা মোক্তারের ষড়যন্ত্রে সবকিছু হারিয়ে অসুস্থ, মরণাপন্ন, শয্যাশায়ী। বাড়িতে ফিরে বাবার অবস্থা আর জমিদারবাড়ির মলিন ভগ্নদশা দেখে কষ্ট পায় নায়ক। স্মৃতিতে উজ্জ্বল দিনগুলো তার চোখের সামনে ভাসে। বাবার জমিদারির ইজিচেয়ারটা এখনো আছে। কিন্তু সেই চেয়ারে বসে হুকুম দেওয়া কড়া মেজাজি মানুষটা নিজের ভেতরে–বাইরে আজ শূন্য। বাঙালি মুসলিম পরিবারের চিরাচরিত কিছু ধর্মীয় আচরণ এ পরিবারে এখনো আমরা দেখি। ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য মুরগি জবাই করতে মা হুজুরের কাছে পাঠায়। বাবা অসুস্থ হলেও নিয়ম করে নামাজ পড়তে এখনো ভোলে না। নায়কের দুরন্ত মিষ্টি এক ছোট বোন আছে, অতিথি আপ্যায়নে সে–ও মায়ের মতোই তৎপর; চিরকালের বাঙালি ঘরের মেয়েটি।
কানা মোক্তার জমিদারকে দেখতে আসে। চারদিকে অনেকের সহায়-সম্পত্তি লুটপাট করে নিয়ে সে–ও এখন জমিদার। নায়কের মাকে প্রস্তাব দিয়ে যায়, এই বসতভিটা তাদের ছেড়ে যেতে হবে না। বিলেতি চিকিৎসক দিয়ে জমিদারের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থাও তিনি করে দেবেন। বিনিময়ে তার বোবা মেয়েটিকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলতে হবে।
স্বামীর মন পেতে বোবা মেয়ে সুখীর শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। সে অনবরত কথা বলার চেষ্টা করে। রাতে স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে বাইরে এসে কণ্ঠ থেকে শব্দ বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়।
দুঃসময়ে এই প্রস্তাবে নায়কও রাজি না হয়ে থাকতে পারে না। তবে চিকিৎসা চলাকালেই জমিদারের মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুশোক সহ্য করতে না পেরে স্ত্রীও চলে যায়। নায়ক তার বোবা স্ত্রী আর বোনকে নিয়ে শহরের বাড়িতে এসে ওঠে। এই বাড়িও মোক্তারের দখলের। আগে যারা থাকত, তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে। প্রভাবশালী মোক্তার মেয়ে–জামাইয়ের জন্য একটা ভালো সরকারি চাকরিও জুটিয়ে দেয়।
মোক্তারের বোবা মেয়ের নাম সুখী। নাম সুখী হলেও চিরকালের জনমদুখী মেয়েদের প্রতিনিধি সে। বেশ গোছানো, সংসারী, পতিব্রতা, গৃহপরায়ণা সুখী। স্বামী, ননদসহ প্রত্যেকের সেবায় এবং সংসারের প্রতিটি কাজে পান থেকে চুন খসতে দেয় না। স্বামী অফিস থেকে বাড়িতে এলে জুতা খুলে দেয়, কাপড় এগিয়ে দেয়, দৌড়ে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে আসে। দেখতেও অপরূপা। কিন্তু স্বামী এত সুন্দরী বউটিকেও মন থেকে মেনে নিতে পারে না। সবার বউ কত সুন্দর করে কথা বলে। কেউ কেউ আবার সুন্দর গানও করে। কিন্তু তার বউ যে কথা বলতে পারে না। তাই সে বউয়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না, ঠিকমতো আচরণও করে না। সব সময় এড়িয়ে চলে, অবহেলা করে। আবার শ্বশুরের কথাও মাথায় রাখে। শ্বশুর জানতে পারলে চাকরি, বাড়ি সবকিছু হারাতে হবে। সে ভয়ও তার আছে।
এদিকে, স্বামীর মন পেতে বোবা মেয়ে সুখীর শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। সে অনবরত কথা বলার চেষ্টা করে। রাতে স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে বাইরে এসে কণ্ঠ থেকে শব্দ বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। তার স্বামী ছোট বোনকে গান শেখানোর জন্য তবলা আর হারমোনিয়াম কিনে দেয়। গানের শিক্ষক রাখে। সুখী ননদের সেই হারমোনিয়াম নিয়েও আড়ালে গান করার চেষ্টা করে। সব চেষ্টাই বৃথা গোঙানিতে পরিণত হয়।
একসময় স্বামীর মন মজে। স্ত্রীতে মন দেয়। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পরিবারকে সঙ্গ দেয়, বাড়িতে অনেক গাছ এনে লাগায়। হঠাৎ মন পরিবর্তন হওয়া স্বামীকে দেখে, স্বামীসুখ পেয়ে বোবা মেয়ে সুখীও আত্মহারা হয়। তবু নিজের ভেতর শব্দ প্রসবের তাড়না তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
গোটা দেশ আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলনে মুখর। দিকে দিকে মিছিল, মিটিং আর প্রতিবাদীদের ওপর পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন। নায়ক এসব থেকে গা বাঁচিয়ে চলে। রাজাকার মোক্তারও এসব দেখে এড়িয়ে যায়। কিন্তু রাজাকারের বোবা মেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত। বাড়ির পাশ দিয়ে মিছিল গেলে ছুটে যায় সে। এই উন্মাদনা আর উদ্দীপনা তাকে উৎফুল্ল করে। তেজি করে। আপ্রাণ শক্তি দিয়ে গলা মেলাতে চায়; পেরে ওঠে না। আর না পেরে ওঠার যন্ত্রণায় কষ্ট শতগুণ বেড়ে যায় তার। জীবনের প্রতি ধিক্কার জন্মায়। স্ত্রীর এই পাগল পাগল দশা দেখে স্বামীও বুঝে উঠতে পারে না যে সে কী করবে। সে নিরুপদ্রব শান্ত একটা জীবনে বিশ্বাসী। দেশ ও ঘরের পরিস্থিতি ভেতরে ভেতরে তাকেও অস্থির করে তোলে। কিন্তু কিছুতেই সে বিপ্লবী দলে যাবে না। এককালের জমিদার পরিবারের সন্তান বাধার প্রাচীর টপকে এসব মুক্তির আন্দোলন, স্বাধীনতার সংগ্রাম, বিপ্লবে ভয় পায়।
গোটা দেশ ক্রমে তেতে ওঠে। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা/তোমার আমার ঠিকানা।’ এই ঠিকানা, এই আত্মপরিচয় আদায় না করে কেউ ছাড়বে না। রাস্তার পাশ দিয়ে মিছিল গেলে ছাতা দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করে নায়ক। বাড়ির পাশ দিয়ে মিছিল গেলে জানালা বন্ধ করে দেয়। বোবা মেয়েটি কানে শব্দ আসামাত্রই ছুটে গিয়ে সেই জানালা আবার খুলে দেয়। সে নির্ভীক। তার শিরায় শিরায় দেশপ্রেমের স্রোত। ঘরবন্দী থেকেও প্রতিদিন জনজোয়ারে ভাসে। তার ভেতর শব্দমুক্তির আগুন, চোখে অনর্গল অশ্রু। এই বোবা মেয়ে আজ সত্যি সত্যি যেন তিতুমীরের কন্যা। বুকের ভেতর তার হাজার যুগের সূর্যতাপ। নিজের রক্তে সে আত্মভাষাকে মুক্ত করবেই করবে।
একটা সময় এসে আমরা দেখি, যখন বাড়ির পাশ দিয়ে মশালমিছিল যাচ্ছিল, জানালায় দাঁড়িয়ে বোবা মেয়ে সুখীর উত্তেজনা ও প্রসবযন্ত্রণা চরমে উঠল। নিজের গলা চেপে ধরে ভেতরের আর্তনাদ, আত্মখুন করে যেন মুখ দিয়ে রক্তের দামামা বেরিয়ে এল একটা মাত্র শব্দ ‘বাংলা’। প্রতিবন্ধী এই মেয়ে গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে, নিজের ভেতর বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে, মেশিনগানের সামনে জুঁই ফুলের গান গাইতে গাইতে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ল।
আসাদের রক্তের চেয়ে এই রক্তের মূল্য কম নয়। একটি গোঁড়া রক্ষণশীল ধর্মান্ধ পরিবারের মেয়ে, একটি বদ্ধ পরিবার তথা রাষ্ট্রব্যবস্থার শেকল পরা একটা মেয়ে, জীবনের প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে করতেও জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেঙে তুবড়ে দিয়ে নতুনের ডাক দিয়ে গেল। আমার ভাষা, আমার পরিচয়ের জন্ম দিয়ে গেল। আমরা যারা কথা বলতে পারি, কথার খেলাপ করি, কথার অপব্যবহার করি, ভাষাকে অপমান করি, আমরা যারা চির সুখীজন, তারা কোনো দিন বুঝতেও পারব না, এই দগ্ধ, জীবনপোড়া মেয়ের ব্যথিত বেদন। এই শেকল পরা বোবা মেয়ের জীবনের যন্ত্রণা। লড়াই করে জিতে নেওয়া তার এই মুক্তির আনন্দ, এই সৃষ্টিসুখের উল্লাস, মৃত্যুকে জয় করে নিয়ে যায়। বুকফাটা মুখের রক্তে, চোখের জলে আমাদের মুক্তি এনে দেয়।
‘ওঙ্কার’ চলচ্চিত্রে বোবা মেয়ে সুখীর চরিত্রে শাবনূর অনন্য, অনবদ্য। নিজের জীবনের সেরা অভিনয়ে তিনি ঐতিহাসিক চরিত্র হয়ে থাকলেন। এই চলচ্চিত্র যদি আজকের সময়ে মুক্তি পেত, শাবনূর দিকে দিকে অনেক প্রচার পেতেন। বোবা মেয়ের স্বামীর চরিত্রে মাহফুজ আহমেদ, বাবা কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি দাগ কাটতে পেরেছেন। আহমদ ছফার রচনার প্রতিটি মুক্ত শব্দের ব্যঞ্জনা এই চলচ্চিত্রে ফুলের মতো পাপড়ি মেলেছে। শৈল্পিক দিক প্রজাপতির মতো ফুলের ওপর নেচে নেচে বেড়িয়েছে। সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নান্দনিক বন্ধনে জুটি বেঁধেছে। তবে আহমদ ছফার চিন্তাচেতনার যুক্তি ও দার্শনিক দিকগুলো আরও কিছুটা উন্মোচন করতে পারলে ভালো লাগত।
আসলে সমাজ, দেশ ও কালের একেকটা সময়ের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি সুসাহিত্য ও সুন্দর সৃষ্টিকর্মের জন্ম দেয়। আবার একেকটা সময়ে এসে এই রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সাহিত্য ও সৃষ্টিকর্মকে গিলেও ফেলে। চিরকালীন বাজারের একটা প্রভাবও থাকে। সেদিক থেকে আহমদ ছফার রচনা প্রথম সারির। আবার পরিচালক যখন সেই রচনা নিয়ে কাজ করেন, তখনকার পরিস্থিতি কিন্তু অন্য রকম। তবে চিরকাল সৃষ্টিশীল মানুষদের মধ্যে পারস্পরিক একটা সময়, দেশ, কাল ও ব্যক্তিসম্পর্কের সেতুবন্ধন তথা বোঝাপড়া থাকে। তাই বর্তমানের সঙ্গে অতীত মিলে যায়। পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের নির্মাণ সেদিক থেকে আহমদ ছফার পথে, আহমদ ছফাকে অনুসরণ করে যথাযথ। এই চলচ্চিত্রে সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্য নির্মাতা, সংগীত পরিচালক, শিল্পনির্দেশক, চিত্রগ্রাহক সবার কাজই ভালো।
শামসুর রাহমান থেকে আহমদ ছফা সবাই আমাদের বর্ণমালার দুঃখকে কাছ থেকে অনুধাবন করেছেন। এই বর্ণমালাকে শ্রেষ্ঠ আসনে অলংকৃত করেছেন। এই গৌরবের বর্ণমালার জন্য দুর্দিন যেন না আসে। আমরা যেন সাহিত্য, শিল্প, চলচ্চিত্র প্রতিটি সৃজনকর্মে ভাষার মান রাখতে পারি।
হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত