রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে না? এই নিয়মগুলো মেনে চলুন

ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার থেকে দূরে থাকা উচিতছবি: পেক্সেলস

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে অধিকাংশ মানুষেরই রাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। আবার ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেও সহজে ঘুম আসে না। বিছানায় এপাশ–ওপাশ করতেই সময় নষ্ট হয়ে যায়।

এই সময়ে কেউ কেউ মোবাইলে রিলস দেখে, কেউ ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ব্রাউজ করে। যা ধীরে ধীরে সমস্যাটিকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে। দীর্ঘ রাত জেগে থাকার অভ্যাস হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে। ঘুম কম হওয়ায় দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটে, মনোযোগ নষ্ট হয়। অন্যদিকে ঘুম ভালো হলে মনমানসিকতা ভালো থাকে, চাপ অনুভব হয় না এবং দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। এই লেখায় রাতে দ্রুত ঘুমানোর কিছু সহজ উপায় নিয়ে আজ আলোচনা করব।

ঘুমানোর জন্য নির্দিষ্ট রুটিন
ঘুমানোর জন্য নির্দিষ্ট একটি রুটিন থাকা ভালো ঘুমের সহায়তার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। এই রুটিন শুরু হবে যখন আপনি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন, তখন থেকে। যেমন বিছানা তৈরি করা, দরজা-জানালা বন্ধ করা বা পর্দা টেনে দেওয়া, রুমের লাইট বন্ধ করা বা কমিয়ে দেওয়া। প্রতি রাতে নির্দিষ্ট একই সময়ে বিছানায় যেতে হবে এবং সকালে একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে। মোটকথা, ভালো ঘুমের জন্য প্রতিদিন একই রুটিন হতে হবে, ছুটির দিনগুলোসহ।

ইলেকট্রনিকস ডিভাইস থেকে দূরে থাকা
মনে রাখবেন, ঘুমানোর রুটিন কিন্তু বিছানায় যাওয়ার আগে থেকেই শুরু হয়। বিছানায় যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারসহ যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজনে এই সময়ে সফট মিউজিক বা পডকাস্ট শুনতে পারেন।

ঘুম ভালো না হলে এর প্রভাব পড়ে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে
ছবি: এআই/প্রথম আলো

ডায়েরি লেখা
রাতে ঘরে ফেরার পর সারা দিনের বিভিন্ন কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা, চাপ কিছুটা হলেও থেকে যায়। পরবর্তী দিনের কাজ নিয়েও চাপ থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে সারা দিন কী কী কাজ হলো, কী ঘটনা ঘটল—সবকিছু একটি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারেন। পরবর্তী দিন কী কী করবেন, সেগুলোও ডায়েরিতে লিখে ফেলেন। দেখবেন দুশ্চিন্তা, চাপ এসব মাথা থেকে দূর হয়ে যাবে।

ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি
ঘুমানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। রুমের আলো জ্বালানো থাকলেও কেউ কেউ ঘুমিয়ে যেতে পারেন। আবার কেউ পুরোপুরি অন্ধকার না হলে ঘুমাতে পারেন না। তবে ঘুমানোর জন্য সবচেয়ে ভালো পরিবেশ হলো রুমের ভেতর নীরব, অন্ধকার ও শীতল পরিবেশ। রুমের ভেতর অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ কিংবা বাইরে থেকে কোনো আলোকরশ্মি যাতে না আসে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

রুমের তাপমাত্রা অনুকূলে থাকাটা আবশ্যক। গরম কিংবা বেশি শীতল হলে ঘুমাতে অসুবিধা হবে। ব্যক্তিবিশেষে চাহিদা অনুযায়ী তাপমাত্রা অনুকূল করে নিতে হবে। কেউ আবার ঘুমানোর সময় সফট মিউজিক শুনতে পছন্দ করেন। মিউজিকের শব্দ কানে শ্রুতিমধুর অনুভূতির সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রুত ঘুম আসতে সহায়তা করে।

জোর করে ঘুমানো যাবে না
বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার পরও অনেক সময় দেখা যায় ঘুম আসছে না। এমন অবস্থায় ঘুমানোর জন্য জোর করে চেষ্টা না করাটাই ভালো। বিছানা থেকে উঠে কোনো আরামদায়ক স্থানে বসুন। নিজেকে রিল্যাক্স করা যায়, এমন কিছু করুন। সেটা বই পড়া হতে পারে কিংবা সফট মিউজিক শোনা। তারপর যখন চোখে ঘুমের ভাব আসবে, কেবল তখনই বিছানায় গা এলিয়ে দিতে হবে।

স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা
স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা ভালো ঘুমের জন্য খুবই উপকারী। আবার যাদের এই দুটির অভ্যাস নেই, তাদের ঘুম খুব একটা ভালো হয় না। তাই ঘুমানোর পূর্বে অনেক বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পরিমাণমতো খাওয়ার অভ্যাস করুন। কফি ও অ্যালকোহল–জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।

মনে রাখবেন, শরীরচর্চা দিনের যেকোনো সময়ই করতে পারেন। অবশ্যই সেটা ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দেড়-দুই ঘণ্টা আগে শেষ করতে হবে।

সূত্র: এনএইচএস.ইউকে