প্রতিদিনের মতো আজও সকালে সংবাদপত্র পড়ছিলাম। হঠাৎ একটা ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপন দেখে থমকে গেলাম। অবশ্য এ রকম বিজ্ঞাপন রোজই থাকে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এটিতে যাঁর নাম লেখা, সেই পাত্রপক্ষ গত সপ্তাহে আমাকে দেখতে এসেছিল। সেই পাত্র অর্থাৎ তমাল রায়কে আমার পছন্দ হয়নি। মাকে বলেছিলাম না করে দিতে, কিন্তু পরিবারের সেই পুরোনো কথা, ভালো মানুষ হাতছাড়া করা ঠিক নয়।
এ সমাজের এক অদ্ভুত নিয়ম। সমাজের দৃষ্টিতে পাত্রীর যত যোগ্যতাই থাকুক না কেন, ‘না’ করে দেওয়ার অধিকার শুধু পাত্রপক্ষের জন্যই বরাদ্দ থাকে। এই বিজ্ঞাপন দেখে খুশি হব নাকি ক্ষীণ দুঃখ পুষে রাখব, ভেবে পেলাম না। আমার অফিস থেকে একটা উপদেশ পেয়েছিলাম।
‘শোন, ভালোবাসা দিবসে ঠিক রাত ১২টায় শুভেচ্ছা জানাবি। তারপর বিকেলে ১০১টা গোলাপ নিয়ে একটা কফিশপে দেখা করবি। দেখবি খুশি হবেই!’ রেহেনা আপা কাজের ফাঁকে বলেছিলেন। ভাগ্যিস, এমন কিছু করিনি। নাহলে বাকি জীবন এই বিব্রতকর অনুভূতি থেকে যেত।
অফিসে যেয়ে দেখি আমার টেবিলে বড় একটা ফুলের তোড়া রাখা, সঙ্গে ছোট কাগজে লেখা—‘তোমার ভালোবাসা’। এই কাজ কে করতে পারে! এমন কেউ জীবনে আসেনি। কে হতে পারে, সেই উত্তর খোঁজা তাই অবান্তর।
‘দেখলি! কাজ হয়েছে।’ রেহেনা আপা এসে বলে গেলেন। আমি কোনো উত্তর দিলাম না।
অফিস শেষে বিকেল চারটায় বেরোলাম। দেখি তমাল রাস্তার অপর পাশে দাঁড়ানো। না দেখার ভান করে দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম।
‘এই যে শুনুন, মনীষা!’ উচ্চস্বরে বলে আমাকে থামালেন।
‘কী বলতে এসেছেন? ওই বিজ্ঞাপনের পর আর কী বলার থাকতে পারে?’ রাগান্বিত হয়ে বললাম।
‘শুনুন! আপনাকে আমার বেশ পছন্দ। কিন্তু পরিবার মানতে নারাজ। বাবা না জানিয়ে এই কাজ করেছে।’ দৃঢ়ভাবে জানালেন।
‘যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন আর কী করবেন?’ আমার নির্লিপ্ত উত্তর।
‘কী আর করব? আপনার হাতটা ধরব।’ প্রতিউত্তর শুনে হাসলাম। দেখলাম, আমার হাতে ১০১টা গোলাপ নেই। আছে শুধু সারা দিনের কাজের শেষে কলমের কালির দাগ।
রমনা, ঢাকা