বীরাঙ্গনাদের জবানিতে তাঁদের গল্প ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’

আমি বীরাঙ্গনা বলছিছবি: সংগৃহীত

সংসারের নিয়ম এই যে, কোনো কিছু পেতে হলে তার জন্য মূল্য দিতে হয়। বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে পাওয়ার জন্য আমাদের বাঙালি জাতিকেও বিরাট মূল্য দিতে হয়েছে। অগণিত নারী, পুরুষ ও শিশুর প্রাণ এবং বিপুল সম্পদের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই দেশ। যারা সাধারণ মানুষ, দেশ ত্যাগ করে ভারতে যায়নি, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেনি, তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের আহার ও আশ্রয় দিয়ে, প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে জনসমর্থন এবং জনগণের সাহায্য–সহযোগিতার মূল্যও অপরিসীম।

নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিতা সাতজন নারীর মর্মান্তিক কাহিনি। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার পরম মহানুভবতায় এই নারীদের বীরাঙ্গনা বলে ঘোষণা করে এবং স্বাধীনতা অর্জনে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি দেয়। নানাভাবে সরকার তাঁদেরকে আর সবার মতো মর্যাদাবান মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে।

আমাদের সমাজ যথেষ্ট উদার মানসিকতার অধিকারী নয়। নানা রকম সংস্কার ও কুসংস্কার এবং ঔচিত্য-অনৌচিত্যের প্রশ্নকে আড়াল করে সামাজিক নিষ্ঠুরতাকে কেবল প্রশ্রয় নয়, প্রাধান্য দেয়। এই বৈরী বাস্তবতায় অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম সমাজকল্যাণের মনোভাব নিয়ে সাহসের সঙ্গে রচনা করেছেন এই গ্রন্থ। তিনি সরেজমিন তদন্ত করে তথ্য নির্ণয় করেছেন এবং বীরাঙ্গনাদের অন্তর্জ্বালা তাঁদেরই জবানিতে সুন্দর ভাষায় প্রকাশ করেছেন।

এই বই শুধু তারা, মেহেরজান, রিনা, শেফা, ময়না, ফাতেমা বা মিনার কাহিনি নয়; বরং তাঁদের মতো নির্যাতিতা হাজারো মেয়ের জীবনযন্ত্রণা উঠে এসেছে এই দুই মলাটের ভেতরে। সবশেষে লেখিকা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, বর্তমান প্রজন্ম এই দেশপ্রেমিক রমণীদের অসম্মান করেনি, বরং মাতৃসম্মানে সমাদৃত করেছে। আরও জানতে চেয়েছে সেসব মহীয়সীদের কথা।

একনজরে
বই: আমি বীরাঙ্গনা বলছি
রচনা: নীলিমা ইব্রাহিম
প্রকাশক: জাগৃতি প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: মোস্তাফিজ কারিগর
পৃষ্ঠা: ১৯০
মুদ্রিত মূল্য: ৪০০ টাকা।

বন্ধু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা