আগামী ১১ সেপ্টেম্বর, নতুন বছর উদ্যাপন করবে ইথিওপিয়ার মানুষ। ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, পূর্ব আফ্রিকার দেশটি তখন ২০১৭ সালে পদার্পণ করবে। অর্থাৎ দেশটি বহির্বিশ্ব থেকে সাত বছর আট মাস পিছিয়ে আছে। কেন তারা পিছিয়ে? আর কীভাবে তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে?
ইথিওপিয়ায় যিশুখ্রিষ্টের জন্মসালকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় পশ্চিমা ক্যালেন্ডারের সাত বা আট বছর পর। ১৫৮২ সালে পোপ গ্রেগরি ত্রয়োদশ এই ক্যালেন্ডার প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুসারে, রোমান চার্চ এই ক্যালেন্ডারের গণনা সামঞ্জস্য করে ৫০০ সিইতে। পুরো বিশ্বও এটি মেনে নেয়। অন্যদিকে, ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স চার্চ পুরোনো ক্যালেন্ডারের হিসাবে চলার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে রোটেট ইথিওপিয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের সিইও সেতু গেটাসিউ বলেন, ‘আমরা ব্যতিক্রম। আমরা কখনোই উপনিবেশ–শাসিত ছিলাম না। আমাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার রয়েছে। নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।’
ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার
ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে আলেকজান্দ্রিয়ার কপ্টিক অর্থোডক্স চার্চের কপ্টিক ক্যালেন্ডারের অনেক মিল রয়েছে। এটি মিসরে অবস্থিত প্রাচ্যের একটি অর্থোডক্স খ্রিষ্টান চার্চ। সৌর-চন্দ্র পদ্ধতি অনুসারে, ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারে বছরে ১৩ মাস হয়। এর মধ্যে ১২ মাস ৩০ দিন করে এবং শেষ মাস ৫ দিন (লিপ ইয়ারে ৬ দিন হয়)।
যাঁরা দেশটিতে ভ্রমণ করতে যান, তাঁদের কাছে মনে হয় টাইম মেশিনে করে পুরোনো দিনে ফিরে গেছেন! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনুভূতি জানাতেও তাঁরা ভোলেন না।
ইথিওপিয়ায় আন্তর্জাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পশ্চিমা ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। আবার দেশটির অসংখ্য মানুষ দুটি ক্যালেন্ডারই মেনে চলেন। বিশেষ করে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোয় যাঁরা বসবাস করেন। যেমনটা বলছিলেন ইথিওপিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক গোইটোম ডব্লিউ টেকল। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন। এখনো কেবল নির্দিষ্ট একটি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে চলতে পারি না।’
তবে অনেকে দুটি ক্যালেন্ডার মেনে চলাটাও বেশ ভালোভাবেই আয়ত্ত করে নিয়েছেন। তাঁদেরই একজন আলোকচিত্রী আবেল গাশ। তাঁর কাছে ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কারণ, এটি অনুসারে বর্ষাকাল শেষেই নতুন বছর শুরু হয়। একই সময়ে ‘আদে আবাবা’ নামে দেশটিতে স্থানীয় একটি আদিবাসী ফুল ফোটে। এটিকে নতুন বছরের প্রতীক বলে মানা হয়। আবেল গাশ বলেন, ‘নতুন বছরে সবকিছু যেন নতুনভাবে শুরু হয়। এটি আমাদের জন্য নতুন সূচনা। ওই সময় বৃষ্টি কমে যাওয়ায়, আপনি যেদিকেই যাবেন, চারদিকে কেবল সবুজ প্রকৃতি চোখে পড়বে।’
আবেল গাশ এটাও জানান যে ইথিওপিয়ায় ইংরেজি নববর্ষের শুরুর দিন ১ জানুয়ারি কোনো তাৎপর্য বহন করে না। তখন শুষ্ক মৌসুম থাকে।
সময় বিড়ম্বনা
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই নতুন দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। কিন্তু ইথিওপিয়ায় দিন শুরু হয় সকালে। অন্যান্য দেশের সকাল ৭টা (সেভেন এএম), ইথিওপিয়ায় হয় সকাল ১টা (ওয়ান এএম)।
বিদেশি পর্যটকদের সময়ের এই পার্থক্য নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন আলোকচিত্রী আবেল গাশ। বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ক্ষেত্রে সব সময় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন যে তাঁরা ইথিওপিয়ান সময়ের কথা বলছেন নাকি পশ্চিমা। আবেল গাশ বলেন, ‘যদি কেউ বলেন যে চলো ২টায় (টু পিএম) দেখা করি; আমি তখন নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করি তাঁরা সকালের কথা বলছেন নাকি বিকেল। কারণ, ইথিওপিয়ান সময়ে টু পিএম মানে সকাল; অন্যদিকে পশ্চিমা সময় অনুযায়ী টু পিএম মানে বিকেল।’
আবেল গাশ নিজেও সময়ের বিড়ম্বনায় বেশ কয়েকবার পড়েছেন। একবার তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার সময় ছিল পশ্চিমা ক্যালেন্ডার হিসাবে। আর তিনি ভেবে নিয়েছিলেন ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসাব। আবেল গাশ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল টু পিএম; আমি মনে করেছিলাম এটা ইথিওপিয়ান সময়ানুসারে, অর্থাৎ সকাল। তারপর যখন পরীক্ষা দিতে গেলাম, দেখলাম যে সেখানে কেউ নেই। ভাবলাম হয়তো পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে।’
অনুবাদ করেছেন তাহসিন আহমেদ