অন্তরালের যাত্রা

যখন সন্ধ্যা নামে...। তুরাগ নদ, ঢাকাছবি: রবিউন নাহার

জীবন এক মহাজাগতিক পরিক্রমা, যেখানে আমরা সবাই অল্প ভরের নক্ষত্র—উজ্জ্বলতা ক্ষণস্থায়ী, তাপ ও আলো দিয়ে পথ আলোকিত করি, শেষে নিভে যাই ম্লান অন্ধকারে। দিনগুলোও এখন ঠিক বিকেলের মতো; সন্ধ্যার প্রস্তুতি নিয়ে, ঘরে ফেরার আয়োজনে ব্যস্ত, আলো থেকে আস্তে আস্তে অন্ধকারের দিকে পা বাড়াচ্ছে।

বিকেলের ম্লান রোদ যেমন জানান দেয় রাত আসন্ন, তেমনি সময়ের এই পর্যায়ে এসে বুঝি, প্রতিটি মুহূর্তই এক অনিবার্য বিদায়ের ইঙ্গিতবাহী। সকালের তীব্রতা, দুপুরের উজাড় করা রোদ—সবই এখন স্মৃতি। এখন শুধুই আলো-আঁধারের সন্ধিক্ষণ, যেখানে শেষ রশ্মিগুলোও যেন লুকিয়ে থাকতে চায়। হয়তো এটাই স্বাভাবিক। জীবন যখন শেষ প্রান্তে পৌঁছায়, তখন সে আলো ছড়ানো বন্ধ করে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।

এই নিভে যাওয়া কি হারানো? নাকি শুধুই একধরনের রূপান্তর? মহাবিশ্ব যেমন তার নক্ষত্রদের শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণগহ্বর বা শ্বেত বামনে পরিণত হতে দেয়, তেমনি মানুষের জীবনও হয়তো এক অদৃশ্য পরিণতির দিকে যাত্রা করে। অল্প ভরের নক্ষত্রের মতো আমরা হয়তো বিশাল বিস্ফোরণে শেষ হব না; কিন্তু আমাদের উত্তাপ, ভালোবাসা, সংগ্রাম—এগুলোই হয়তো মহাকাশের কোথাও এক আস্তরিক ছাপ রেখে যাবে।

বিকেল যেমন দিন ও রাতের মধ্যে এক মায়াময় সেতু, তেমনি এই সময়টাও জীবনের দুটি অধ্যায়ের মাঝখানের দোলাচল। হয়তো ঘরে ফেরার এই আয়োজন আসলে এক নতুন যাত্রারই প্রস্তুতি। অন্ধকার শুধুই অস্থায়ী—একদিন আবার নতুন কোনো সকালের জন্য অপেক্ষা করবে এই মহাজাগতিক চক্র।

তাই আলো থেকে অন্ধকারে লুকিয়ে পড়ার এই প্রস্তুতিও যেন পরাজয় নয়, বরং এক গভীরতর যাত্রার সূচনা। নক্ষত্রের মতোই আমরা হয়তো একদিন নিভে যাব, কিন্তু আমাদের আলো ছড়িয়ে যাবে সময়ের অসীমতায়।