শৈশবের দিনগুলোতে লোডশেডিং

লোডশেডিং হলে মোমবাতির আলোয় পড়ার প্রচলন ছিলফাইল ছবি

নব্বইয়ের দশকে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে শৈশবের পুঞ্জীভূত ঘটনাগুলো মনের অন্তর্জালে বেশ সুনিপুণভাবেই গেঁথে আছে। কিছু স্মৃতির জায়গা জুড়ে আছে বর্তমানের আলোচিত লোডশেডিং।
ছোটবেলায় দিনে বেশ কয়েক ঘণ্টা ইলেকট্রিসিটি না থাকা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে সন্ধ্যার পর লোডশেডিং ছিল উপভোগ্য। ২০০৪ সালে আমি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনার জন্য তেলের কুপি, হারিকেন অথবা মোমবাতি ছিল ভরসা। বেশির ভাগ দিন মোমের আলোতে পড়তাম। আগুনের মাঝখান দিয়ে আঙুল নাড়ানো, হাতে মোমের ফোঁটা ফেলে ধৈর্যধারণ পরীক্ষা, বিদ্যুৎ ফিরে এলে সবার আগে কে মোমবাতি নেভাবে, তার প্রতিযোগিতা চলত। সন্ধ্যায় গৃহবধূদের নিত্য কাজ ছিল হারিকেনের চিমনি মোছা এবং তাতে পর্যাপ্ত তেল আছে কি না যাচাই করা।

লোডশেডিংয়ে চাঁদের সঙ্গে হাঁটতে ভালো লাগত। কৃত্রিম আলো নিভে যাওয়ার পর যেন প্রকৃতি জেগে ওঠে। চাঁদের মোহনীয় আলো সিক্ত করে রাখে আকাশকে। আমি ও রাকিব রাস্তার দুই দিকে চলে যেতাম, চাঁদ কার সঙ্গে হাঁটে দেখার জন্য। এক পাশ থেকে আমি চিৎকার করে বলতাম, ‘চাঁদ আমার সঙ্গে হাঁটছে, অপর পাশ থেকে রাকিব বলত, না, আমার সঙ্গে।’
বাঁশবাগানের ঝোপঝাড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াত জোনাকির দল। লোডশেডিং হলে আমরা দল বেঁধে বের হতাম জোনাকি ধরতে। হাত বাড়িয়ে সুর করে বলতাম,
‘এই জোনাকি বসবি হাতে,
মিষ্টি মণ্ডা দেব খেতে।’

দু-একটা জোনাকি উড়ে এসে হাতে বসত। ছেলেরা লাফিয়ে জোনাকি ধরে কাচের বোতলে ভরে টেবিলে রাখতাম, টিম টিম আলো পুরো টেবিলে ছড়িয়ে পড়ত। অবাক হয়ে ভাবতাম জোনাকির গায়ে এই আলো কোথা থেকে এল।
মাঝেমধ্যে উঠানে মাদুর বিছিয়ে গল্পের আসর জমে উঠত। চাঁদের আলোতে দাদু আমাদের রাজা-রানি, রাক্ষস-খোক্কসের গল্প শোনাতেন। গালে হাত দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনতাম, আর হারিয়ে যেতাম গল্পের দুনিয়ায়। শৈশবের সেই দিনগুলো কতই না সুন্দর ছিল!

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা