আছে না কিছু মানুষ, যাঁরা একা থাকতে পছন্দ করে। নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চায় নিজের মধ্যে। মানুষের সঙ্গে সহজে খাপখাওয়াতে পারে না নিজেদের।
একজন লেখিকা স্টেশনে বসে একটা দারুণ চরিত্র কল্পনা করে ফেললেন। কিন্তু সেটা কাগজে লিখে রাখার জন্য কারও কাছ থেকে একটা কাগজ-কলম চেয়ে নেবেন, সেটা করতে পারছিলেন না। তিনি প্রচণ্ডরকমের অন্তর্মুখী। কীভাবে একটা কলম চাইবেন? সেই মানুষটা ছিলেন জাদুর বিস্ময় দুনিয়ার বিখ্যাত হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাওলিং। আপনারও কি কখনো এমন মনে হয়েছে যে কারও কাছে কিছু চাইব কীভাবে? কিংবা মানুষের থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করেন? এসবেই কিন্তু ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখীর লক্ষণ।
আছে না কিছু মানুষ, যাঁরা একা থাকতে পছন্দ করে। নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চায় নিজের মধ্যে। মানুষের সঙ্গে সহজে খাপখাওয়াতে পারে না নিজেদের। ঘুরতে গেলেও একাই যেতে চায়। আয়োজন-কোলাহল থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পছন্দ করে। মানুষের সামনে গিয়ে কথা হারিয়ে ফেলে। সহজে মিশে যেতে পারে না। সব সময় চুপচাপ থাকতেই ভালোবাসে। আজকের দিনটি তাদের জন্যই। তাদের নিজের জগতে ডুব দিয়ে হারিয়ে যাওয়ার দিন।
অন্তর্মুখীরা নিজের মতো করে উদ্যাপন করতে পারেন আজকের দিনটি। কোথাও একা ঘুরতে গিয়ে, পছন্দের বই পড়ে, সিনেমা দেখে, নিজের পছন্দের খাবার রান্না করে কিংবা কোনো এক নির্জন কফিশপের এক কোনায় বসে মানুষ দেখে। আপনার যেভাবে ইচ্ছা, নিজের মতো করে সেভাবেই গুছিয়ে নিতে পারেন দিনটিকে। নিজেকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করার দিন।
আমরা অধিকাংশ সময় ইন্ট্রোভার্টদের অসামাজিক হিসেবে তুলে ধরি। এটা ভুল ধারণা। ইন্ট্রোভার্ট মানে কিন্তু অসামাজিক না। অনেক সময় এরাও অন্তর্মুখিতার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন। নিজেদের কমফোর্ট জোন পেলে গল্প, আড্ডায় মেতে উঠতে পারেন। পরিচিত মানুষের সঙ্গে তাঁরাও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারেন। মানিয়ে নিতে পারেন সব পরিস্থিতি। এদের এড়িয়ে যাওয়া মানে, না পারা নয়; বরং নিজের কাছে নিজের একটা সীমাবদ্ধতা মাত্র।
ইন্ট্রোভার্টদের খাটো কিংবা আলাদা করে দেখার কিছু নেই। এরা অনেক গভীরে চিন্তা করতে পারে। আত্মসচেতন, সৃজনশীল এবং শৈল্পিক কাজে অনেক বেশি মনোযোগী। জে কে রাওলিং সেদিন কাগজ কলম পেয়ে গেলে হয়তো হ্যারিকে এমনভাবে আনতেই পারতেন না। যেটা তিনি স্টেশনে বসে চিন্তা করে পুরো চরিত্রটা মনের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন। নিজেকেই সেই চরিত্রে উপস্থিত করে পুরো ছবিটা মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছিলেন। ইন্ট্রোভার্ট বিশেষজ্ঞ এবং লেখক ‘সুসান কাইন’ বিল গেটসকেও ইন্ট্রোভার্ট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। জানলে অবাক হবেন, মার্কিন যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন, মহাত্মা গান্ধী, আলবার্ট আইনস্টাইন, এমনকি মার্ক জাকারবার্গও যুক্ত আছেন ইন্ট্রোভার্টদের তালিকায়।
জার্মান মনোবিজ্ঞানী ফেলিসিটাস হেইনের হাত ধরে ২০১২ সালে প্রচলন শুরু হয় ওয়ার্ল্ড ইনট্রোভার্ট ডের। ২ জানুয়ারি উদযাপন করা হয় দিনটি। আপনি ইনট্রোভার্ট হয়ে থাকলে আপনিও নিজের মতো করে উদ্যাপন করতে পারেন দিনটিকে।
মিরপুর ১০, ঢাকা