ঘুম ভাঙার পরই চোখের সামনে বাবাকে দেখা চাই মায়ার। এটা নিত্যদিনের অভ্যাস। কিন্তু আজ বাবাকে কোথাও খুঁজে পেল না সে। এ নিয়ে ভীষণ মন খারাপ। বাবার কাছে যা কিছু আবদার করে, সবই পূরণ হয়। মায়ার সব আবদার মেনে নেন বাবা।
সেদিন ভরদুপুরে বাবা ঘুমাচ্ছিলেন। মায়া সুন্দর করে মেঝেতে বসে ঘুম যাতে না ভাঙে, আস্তে আস্তে বাবার পায়ের সব আঙুলে নেইল পলিশ লাগিয়ে দিল। ঘুম থেকে উঠেই বাবা এ কাণ্ড দেখে মায়ার মায়ের কাছে অভিযোগ দিলেন, ‘দেখেছ তোমার মেয়ের কাণ্ড! এই ভরদুপুরে এসব করছে।’ এদিকে বাবার এসব মেকি রাগ মায়া বুঝে মিটিমিটি হাসে।

অনেক সময় বাবার তেলতেলে উঁচু নাকের মাথায় মায়া আলতো করে কামড় দিত। বাবা রাগ করতেন না। বিরক্ত হয়ে একদিকে চুপ হয়ে বসে থাকতেন। প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে স্কুল থেকে ফেরার সময় হেঁটে আসতে হয়। তবে বাবার সঙ্গে এলে সুবিধা। তিনি আগে থেকেই স্কুল গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। সব সময় রিকশা নিয়েই মেয়েকে বাসায় পৌঁছে দেন।

মায়া এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আর তাঁর বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। সারা দিন বাসাতেই থাকেন। নানা শারীরিক জটিলতায় প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকেন। মায়া চেষ্টা করেন বাবার মুখে হাসি ধরে রাখতে। যতক্ষণ বাসায় থাকেন, সেবা-যত্নের কমতি রাখেন না। তবে ছোটবেলার মতো আর দুষ্টুমি করতে পারেন না।

বর্ষা মৌসুমের একদিন হঠাৎই বাবার অসুস্থতা বেড়ে গেল। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে দ্রুত। এদিকে মায়ার তখন তীব্র জ্বর—১০২ ডিগ্রি প্রায়! বাবাকে শার্ট পরিয়ে ছেলের সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন মা। এ অবস্থায় মেয়েকে একা রেখে যে যাওয়া সম্ভব নয়। স্বামী সুস্থ হয়ে ফিরবেন, এই বিশ্বাস ছিল।

সেই যে বাবা গেল! আর ফিরে আসেননি। দুই দিন পর কেবল একটা খাটিয়া এসেছিল বাসায়, আত্মীয়স্বজন ভিড় করেছিল। মায়া এখন আর আগের মতো দুষ্টুমি করে না। সব সময় চুপচাপ থাকে।