একুশ বসন্ত

প্রতীকীছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

নব যৌবনে বসন্ত ছিল পরম বন্ধু। আমার হৃদয়টা ছিল সুরভিত বসন্তের সুবিস্তীর্ণ ফুলের বাগানের মতো। বনের গায়ে যে পলাশ মঞ্জরি রূপের স্ফুলিঙ্গে আগুন লাগিয়ে দেয়, সেই পুষ্পমঞ্জরির সৌন্দর্য তিরের ফলা হয়ে বিঁধে আছে আমার মনের চোখে। হরেক রকমের ফুল, ফল ও রঙে ভরা এই ঋতুরাজ বসন্তে নব যৌবনের উদ্দামতায় ফুল যেমন চনমনে স্বভাবের হয়, তেমনই আমার খামখেয়ালি মনের তৃষিত যৌবনও উন্মনা হয়ে ঘুরেছিল অজ্ঞাত রমণীর ভালোবাসার কাঙাল হয়ে।

বসন্তকে মনে হলো ভোমরার মতো উড়নচণ্ডী স্বভাবের। ভোমরা এসে পুষ্পের নিটোল গালে আলতো চুমুক বসায় মোহে। আবার ঘটক হয়ে ঠোঁটে পরাগ মেখে কামুক ফুলকে সাহায্য করে মিলন ঘটাতে। একদা তার রূপ ও রসের রহস্যময়তায় আমিও তলিয়ে গিয়েছি অতলে। পুরোদস্তুর প্রেমিক হয়ে ফিরে পাই নিজেকে। বসন্ত আমার বাহক হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল।

কোনো এক অজানা অচেনা ষোড়শীর প্রেম পরাগ মেখে দিয়েছিল আমার গায়ে। অতঃপর আমাদের সূচনা হলো; প্রেম নিবেদনের কবিতা লিখব বলে প্রেম মহাকাব্যের গৌরচন্দ্রিকা রচনা করলাম স্বহস্তে। কিন্তু ভোমরা আর বসন্ত দুটোরই চরিত্র খারাপ। ভোমরা কুমার ফুলের পরাগ সহস্র কুমারী ফুলের গায়ে লাগায় বিশ্বাসভঙ্গের মতো। আর বসন্ত পলাশের বাহারের মতো ষোড়শীর হৃদয়ে আগুন লাগায়। উন্মনা ষোড়শী ও ভোমরা নিষ্পাপ ফুলের কুঁড়িতে থিতু হয় না কোনো কাল, বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় বসন্তে মধু সংগ্রহের লিপ্সায়।

ঋতুরাজ এখন আমার কাছে অবহেলাই পাচ্ছে কেবল। কারণ, আমি দুঃখ–তাড়ানিয়া হয়ে একুশ বসন্ত পার করে দিয়েছি নির্জনে স্বপ্নভঙ্গের মতো।

বন্ধু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা