অক্ষরবিহীন চিঠি

চিঠিছবি: পেক্সেলস

রাত ঠিক তিনটা। একাকী রোশনির ঘুম ভেঙে গেল দরজার নিচে চাপা দেওয়া একটা কাগজের টুকরার আওয়াজে। কুয়াশাচ্ছন্ন জানালা দিয়ে চাঁদের ম্লান আলো পড়ছে মেঝেতে। ভয় সামলে সে ধীরে ধীরে কাগজটা হাতে নিল।

চিঠিটা একেবারে সাদামাটা। কোনো শব্দ নেই, কোনো অক্ষর নেই। শুধু ফাঁকা সাদা কাগজ। প্রথমে মনে হলো, হয়তো মজা করার জন্য কেউ পাঠিয়েছে। কিন্তু পরপর তিন রাত একই ঘটনা ঘটতে থাকায় রোশনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল।

কাজের ফাঁকে অফিসের সহকর্মী আনিসকে ঘটনাটা জানাল সে। আনিস রহস্যের গন্ধ পেয়ে বলল, চিঠিটা একটু ভালোভাবে পরীক্ষা করা দরকার। দেখা যাক, এতে কোনো গোপন কোড লুকিয়ে আছে কি না!

পরদিন রাতে চিঠি পাওয়ামাত্রই রোশনি সঙ্গে সঙ্গে আনিসকে ডেকে আনল। ব্ল্যাকলাইট অন করতেই দেখা গেল, কাগজের ওপর অস্পষ্ট কিছু আঁচড় কাটা! আনিস সাবধানে কাগজটা আয়নার সামনে ধরতেই ধীরে ধীরে শব্দ ফুটে উঠল, ‘তুমি কি আমাকে ভুলে গেছ?’

রোশনি আতঙ্কে কাঁপতে লাগল। এই হাতের লেখা তার ছোটবেলার বন্ধু রুদ্রর! বছর দশেক আগে একটা দুর্ঘটনায় মারা গেছে সে। কিন্তু সে তো মৃত! তাহলে?
আনিস কিছু বলার আগেই জানালার পর্দা ধীরে ধীরে দুলে উঠল। ঠান্ডা বাতাসে ফিসফিস শব্দ শোনা গেল, ‘তোমার প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছ, রোশনি?’

হঠাৎ রোশনির মনে পড়ল, মৃত্যুর আগের রাতে রুদ্র বলেছিল, ‘আমাদের বন্ধুত্ব কখনো মুছে যাবে না, তা–ই তো?’
রোশনি হতভম্ব হয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি ভুলিনি…।’

সঙ্গে সঙ্গে বাতাস থেমে গেল, জানালার পর্দা স্থির হলো। এরপর আর কখনো অক্ষরবিহীন চিঠি আসেনি।

জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ