তোমাকে পড়ছে মনে

অলংকরণ: আরাফাত করিম

দ্বিধাদ্বন্দ্বে অতিবাহিত সময়ে আমিত্বের লোপ
কবিতার খাতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে—
কাঁপুনি দিয়ে জ্বরে বকে যাচ্ছি আমি,
সংজ্ঞাহীন না জানি কত রাতের অবসান।
বিষণ্ন বিকেলে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে,
দূর-বহুদূরের শান্ত পাহাড়ে সুখানুভূতি নেই,
মাসিমার গৃহে প্রবেশে স্থির হয়ে
ইশারায় চায়ের পেয়ালা রেখে যেতে বললাম।
উদ্বাস্তুর মতো হন্তদন্ত হয়ে
এক চুমুকেই চায়ের পেয়ালা শেষ করে
অপলকে তাকিয়ে আছি প্রকাণ্ড ঘড়িটায়—
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল আবার।
সন্ধ্যার আগমনে কিঞ্চিৎ আপত্তি আমার
অন্ধকার রাতে বড্ড কষ্ট হয়,
অসুস্থ নবজাতকের মতো চিৎকারে কাঁদার সাহস নেই—
বোবাকান্নায় অস্থিরতা আরও বাড়ে।
সবুজ বাতির আবছা আলোয় দেখছি—
গতকালের বুনোফুলগুলো এখনো সতেজ,
মৃদু বাতাসে পঞ্জিকাটা কাপঁছে
আধমরার মতো উপুড় হয় পড়ে আছে দেহটা।
দূরের মসজিদ হতে আজানের ধ্বনি বাজছে,
কিঞ্চিৎ ভয়ের অবসান হলো;
একটু পরেই ছোট্ট পাখিদের কিচিরমিচির শুনব—
রাতের অবসানে কিছুটা শান্তি।

দ্বিধাদ্বন্দ্বের জালে আবদ্ধ আমি,
কবে মরণের দূত আসবে শিয়রে
শিউলি গাছের তলে পাশাপাশি থাকব;
একা পারছি না থাকতে ওগো।
বসন্তের শেষে কোকিলের প্রস্থানের আগে
তুমি চলে গেলে,
বিকেলে জানাজায় শেষবিদায়ে
শিউলিতলায় তোমার স্থান হলো।
অসহায় সেই রাতে,
যখনই হাতে হাত রেখে চলে গেলে দূরে,
অন্ধকার রাতে বড্ড ভয় আমার—
অসহায় আমিত্বের ভয়।
মরণের দূতের অপেক্ষায় আছি,
শিউলিতলায় জায়গা পরিষ্কার করে রেখেছি,
আর থাকতে পারব না একা—
তোমাকে পড়ছে মনে আজ।
শিউলিতলায় পাশাপাশি থাকব সুবাসিত আবরণে,
মৃত্যুর দূতের আগমন বাকি শুধু,
তোমাকে খুব পড়ছে মনে—
তাই দেরি নয়, আসছি দেখা হবে এই ক্ষণে।