অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রতীকী ছবিরয়টার্স

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তরুণ-তরুণীদের অন্যতম সঙ্গী স্মার্টফোন। বাংলাদেশের প্রায় ১৩ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দেখা দিচ্ছে সময়ের অপচয় এবং শারীরিক ও মানসিক বিষাদগ্রস্ততা। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি ১৫ মিনিটে কোনো নোটিফিকেশন ছাড়াই কারণে-অকারণে একবার হলেও মুঠোফোন হাতে নেন তরুণ-তরুণীরা। মুঠোফোন ছাড়া এই যুগে চলাফেরা করাও প্রায় অসম্ভব। ইন্টারনেটের এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে এবং এর প্রভাবে কী কী রোগের সম্মুখীন হতে হয়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থায়।

সম্প্রতি সুইডেনের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব তরুণ-তরুণী মুঠোফোন ব্যবহার করেন এবং যাঁদের বয়স ২০ বছরের কম, অন্যদের তুলনায় তাঁদের ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, একটি দুই মিনিট স্থায়ী মুঠোফোন কল শিশুদের মস্তিষ্কে যে হাইপার অ্যাকটিভিটি সৃষ্টি করে, তা পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত মস্তিষ্কে বিরাজ করে। এর ফলে শিশুরা ব্রেন ক্যানসার, ব্রেন টিউমারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বড়দের চেয়ে শিশুদের রেডিয়েশন শোষণ শতকরা ৬০ ভাগ বেশি। যেহেতু শিশুদের চামড়া ও হাড় নরম, তাই ক্যানসার ঝুঁকিও বেশি। এ ছাড়া অন্যান্য সমস্যার মধ্যে খিঁচুনি, নির্ঘুম ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে।

এসব ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চার্টার্ড সোসাইটি অব ফিজিওথেরাপি নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সতর্ক করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তারা দেখেছে, অফিস থেকে বের হওয়ার পরও যাঁরা স্মার্টফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের সামনে বসে সময় কাটান কিংবা কাজ করেন, তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। স্মার্ট ডিভাইসের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি এই প্রজন্মকে ‘স্ক্রিন দাসে’ পরিণত করেছে।

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ই-মেইল পড়তে, টেক্সট পাঠাতে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো চেক করতে। সব মিলিয়ে যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ঘণ্টা। সম্প্রতি এ বিষয়টি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে মার্কিন কাইরোপ্র্যাক্টর ডিন ফিশম্যান এটিকে একটি স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে নাম দিয়েছে ‘টেক্সট নেক সিনড্রোম’। টেক্সট নেক সিনড্রোম মূলত প্রচণ্ড ঘাড়ের ব্যথার পুনরাবৃত্তি, যা দীর্ঘ সময় ধরে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে রাখার জন্য ঘটে থাকে। এ অবস্থাটি ‘টার্টল নেক পশ্চার’ এবং ‘অ্যান্টেরিয়র হেড সিনড্রোম’ নামেও পরিচিত।

সম্প্রতি কলম্বিয়ার সিমন বলিভার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১৯ থেকে ২০ বছর বয়সী ৭০০ তরুণ-তরুণী ও ৩৬০ কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণা চালান। এতে উঠে এসেছে, দিনে পাঁচ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে মুঠোফোন ব্যবহার করলে স্থূলতার ঝুঁকি ৪৩ শতাংশ বাড়ে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিনিযুক্ত পানীয়, ফাস্ট ফুড, মিষ্টি ও বারবার নাশতা খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এ ছাড়া তাঁদের শারীরিক সক্রিয়তা অনেক কমে যায়। গবেষকেরা বলছেন, যাঁদের ওজন বেশি থাকে, তাঁদের ২৬ শতাংশ এবং আগে মেদযুক্ত ছিল এমন ব্যক্তিদের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ পাঁচ ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোনে যুক্ত থাকেন। অতিরিক্ত সময় মুঠোফোন ব্যবহারে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যে শারীরিক সক্রিয়তা কমে, তাতে অকালমৃত্যু, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ও নানা ধরনের ক্যানসারের সম্মুখীন হতে হয়।

গবেষণা প্রবন্ধের শীর্ষ লেখক মিরারি ম্যান্তিলা-মোরন বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য এটা জানা ও সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মুঠোফোন ডিভাইসের আকর্ষণীয় উপযোগী ফিচার থাকলেও এটা অবশ্যই উন্নত অভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর আচরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। তাই তথ্যপ্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে স্মার্টফোন ব্যবহারের দিকে হতে হবে সতর্ক।

বন্ধু, কক্সবাজার বন্ধুসভা