পুঁথিসাহিত্যের কিংবদন্তি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (১১ অক্টোবর ১৮৭১—৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩)প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

সবুজ-শ্যামল পাখি ডাকা ছায়াঘেরা সুচক্রদণ্ডী গ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। পটিয়া বাইপাস চত্বরের ইন্দ্রপুল ব্রিজের উত্তর পাশ দিয়ে সুচক্রদণ্ডি গ্রামের প্রবেশদ্বার। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ সড়ক হয়ে একটু ভেতরে গেলে ছবির মতো গ্রাম। রাস্তার পাশে চোখে পড়বে পুরোনো মন্দির, প্রাচীনকালের জমিদার বাড়ি, প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিছু দূর গেলে দেখা যাবে পুকুর পাড়ে ছোট্ট একটা বাড়ি। বাড়িটি আদিকালের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। বাড়ির গায়ে লেখা ‘সাহিত্যবিশারদ ভবন’।

সাহিত্যবিশারদ ভবনে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে ঘরের দেয়ালে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ছবি। এই বাড়িতে তিনি ১৮৭১ সালের ১১ অক্টোবর, বাংলা ১২৩৩ সনের ২৫ আশ্বিন জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মুনশী নুরুদ্দীন ও মাতা মিশ্রীজান। মাতা ছিলেন হুলাইন গ্রামের শিক্ষিত ও বনেদি পাঠান তরফদার দৌলত হামজা বংশের কন্যা। অপুত্রক মাতামহের নাম ছিল মুশাররফ আলি। বাবা মারা যাওয়ার তিন মাস পর আবদুল করিমের জন্ম হয়। ১৮৮৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মাকেও হারান। ১৮৮২ সালে আবদুল করিমের দাদা-দাদি তাঁদের ছেলে আইনউদ্দীনের (আবদুল করিমের চাচা) বড় মেয়ের সঙ্গে আবদুল করিমের বিয়ে দেন। ছোটবেলা থেকে দাদা-দাদি ও চাচা আইনউদ্দিনের স্নেহ- ভালোবাসায় লালিত হন তিনি।

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সাহিত্যিক জীবনে দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায়। একটি হলো প্রাচীন পুঁথিপত্র সংগ্রহ ও তথ্য সন্ধান করা। তাঁর মধ্যে কোনো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম ভেদাভেদ ছিল না। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুঁথি সংগ্রহ করতেন। এই কাজটা সমগ্র দেশে আবদুল করিম প্রথম শুরু করেন। সে সময় তিনি বেশ প্রবন্ধ লিখতেন। ৩০টিরও বেশি পত্রিকায় তাঁর লেখা ছাপা হয়েছে। সাহিত্য, সংহিতা, সুধা, পূর্ণিমা, নবনূর, অর্চনা, ভারত সুহৃদ, অবসর, প্রদীপ, বীরভূমি, কোহিনূর, প্রকৃতি, আরতি, আশা, ইসলাম প্রচারক, এডুকেশন গেজেটে নিয়মিত লিখতেন।

চট্টগ্রাম থেকে পূজারী ও সাধনা নামক দুটি পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। সাহিত্যবিশারদ আবদুল করিম নবনূর পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। সারা দেশে পুঁথি সংগ্রহের জন্য তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। সৈয়দ এমদাদ আলী, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁকে বড় ভাইয়ের মতো জানতেন। সাহিত্যবিশারদের চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়ে রচিত ‘ইসলামাবাদ’, ১৩২৫ সনের মাসিক সওগাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। বাংলা একাডেমি গ্রন্থটি প্রকাশ করে। গ্রন্থটির সম্পাদনা করেন সৈয়দ মর্তুজা আলী।

পুঁথি গবেষক ও সংগ্রাহক আবদুল করিমকে ১৯০৯ সালে সাহিত্যবিশারদ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৫৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এই মহান সাধক পৃথিবী থেকে চিরতরে প্রস্তান নেন।

বন্ধু, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা