একজন শাহরিয়ার স্যার

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

রাজবাড়ী সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পরই কলেজ বিতর্কে অংশগ্রহণ করি। সেখানেই পরিচয় মোহাম্মদ শাহরিয়ার রহমান স্যারের সঙ্গে। তিনি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আর আমি মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। উচ্চমাধ্যমিকের দুই বছরে যতবার স্যারের সঙ্গে বিতর্ক শিখতে বা ক্যাম্পাসের হাঁটাপথে দেখা হয়েছে, প্রতিবারই তিনি পড়াশোনার খোঁজ নিয়েছেন, বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। সব সময় বলতেন, ‘দেখো মাহামুদুল, তুমি এখন জীবনের গোল্ডেন টাইম পার করছ। জীবনকে কোন দিকে নিতে চাও, সে সিদ্ধান্ত তোমার হাতে।’ প্রতিবার এ কথা শোনার পর টেনশন হতো। আসলেই তো, জীবন কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছি?

কলেজে এক মেয়েকে ভালো লাগা শুরু হয়। মাথাভর্তি লম্বা কালো চুল আর ছিপছিপে গড়নের মেয়েটির সঙ্গে বেশ সখ্য গড়ে ওঠে। ক্লাসের টাইম ছাড়া বাকি সময় তার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম। একদিন শাহরিয়ার স্যার আমাকে ডাকলেন। বিতর্ক নিয়ে কিছু কথা জানাবেন। সেই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম। শুনেছি, প্রেমে পড়লে নাকি তার ছাপ চোখে ফুটে ওঠে। আমি প্রেমে পড়েছিলাম কি না জানি না, তবে স্যারের অভিজ্ঞ চোখ ফাঁকি দিতে পারলাম না। ফিরে আসার সময় আমাকে বললেন, ‘মাহামুদুল, পৃথিবীটা স্বার্থপরদের জায়গা। নিজের মূল্যবান সময়কে যে মোহে ব্যয় করবে, স্বার্থ ফুরালে সে মোহ তোমাকে অবশ্যই ত্যাগ করবে। হাতে সময় খুব অল্প। কয়েক মাস পর তোমার উচ্চমাধ্যমিক। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। পড়া শুরু করে দাও।’

স্যার সেদিন কোনো মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন কি না জানি না। অদ্ভুতভাবে মেয়েটির সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে ফেলি। সে আর আমাকে ডাকেনি, সম্ভবত আমার ভালো চেয়েছিল। তারপর শুরু হয় করোনা মহামারি। ঘরে বসেই শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি।

বছরখানেক পর স্যারকে গিয়ে বলেছি, ‘স্যার, আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।’ কথাটা শুনে উনার চোখেমুখে যে তৃপ্তির ছোঁয়া দেখেছি, তা সারা জীবন মনে থাকবে। তিনি এখনো পরামর্শ দেন, চাকরির জন্য পড়তে বলেন। বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একটা ছাঁচের মতো। এখানে যেহেতু পড়েছিস, দোয়া করি, মানুষ হয়ে বের হবি।’

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়