গণিত–ভীতি এবং অন্যান্য
গণিত বিষয় ভয় পায় না, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। গণিত নিয়ে অগণিত শিক্ষার্থীর নানা অভিযোগ। অথচ গণিত একটা মজার বিষয়। যে গণিত বোঝে, সব বিষয় তার কাছে সহজ মনে হবে।
গণিতের ভিত্তি শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। শিশুরা মূলত তার পরিবার থেকে সংখ্যার ধারণা পায়। মৌখিকভাবে সামান্য যোগ-বিয়োগ করতে পারে। সচেতন অভিভাবকেরা সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর আগেই অক্ষরজ্ঞান ও গণনা শিখিয়ে দেন। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র অভিভাবকের বেশির ভাগ সন্তান বিদ্যালয়ে আসার পর সংখ্যার ধারণা পায়।
গণিত শিক্ষক যত বেশি হাসিখুশি হবেন, শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত শেখা তত সহজ হবে। শিক্ষককে অবশ্যই শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা প্রাক্–প্রাথমিকে শিখিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে ভালোভাবে রপ্ত করার পর ১০০ পর্যন্ত অঙ্কে লিখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সংখ্যার পাঠোদ্ধার সম্ভব। কিছু দুর্বল শিক্ষার্থী পিছিয়ে থাকবে। পাঠদানের সময় শিক্ষককে বিভিন্ন খেলা ও কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। বাস্তব উপকরণ ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীদের শিখন সহজ হবে।
সংখ্যার খেলা নিয়েই গণিত। ০ থেকে ৯, এ ১০টি অঙ্ক দিয়েই সংখ্যা তৈরি করা হয়। সেখান থেকে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, নামতা, স্থানীয় মান, ভগ্নাংশ, দশমিক ভগ্নাংশ ও পরিমাপের একক এগুলো জানা সম্ভব।
জ্যামিতিক আকৃতি শেখানোর জন্য আকর্ষণীয় উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। বাস্তব পরিবেশ থেকে জ্যামিতিক আকৃতি শেখাতে হবে। মাপজোখ শেখানোর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্যামিতি বক্স ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।
গণিত শিক্ষকের চেহারা দেখলেই অনেক শিশু ভয় পায়। গণিত পরীক্ষায় ফেল করলে শিক্ষার্থীদের মন ছোট হয়ে আসে। তারা ভাবে, তাদের দিয়ে অন্য বিষয় পাস হলেও গণিত পাস হবে না। এমন অনেক শিক্ষক আছেন শিক্ষার্থীদের ভর্ৎসনা করেন।
অভিভাবকদের চিন্তা একটি বিষয় নিয়ে, সেটি হলো গণিত। শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয় গণিত একটি কঠিন বিষয়। গণিত–ভীতি শুরু হয় ছোটবেলা থেকে। এই ভীতি দূর করতে হলে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই বোঝাতে হবে গণিত একটি মজার বিষয়। শিক্ষককে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। স্লোগান হতে হবে ‘এসো আনন্দে গণিত শিখি’। আর্কিমিডিস, আল খোয়ারিজমি, আর্যভট্ট... বিভিন্ন গণিতবিদদের গল্প শোনাতে হবে। তাঁরা গণিতকে ভালোবেসেছিলেন বলেই পৃথিবীসেরা গণিতবিদ হতে পেরেছিলেন।
ছোটবেলায় গণিত–ভীতি দূর হলে পরবর্তী জীবনে শিক্ষার্থীরা গণিতে অনেক ভালো ফলাফল বয়ে আনবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের ভূমিকা অধিক বলে মনে করি।
বন্ধু, রংপুর বন্ধুসভা