চলন্ত ট্রেনের নাগাল পেলাম যেভাবে
তখন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট। রিজার্ভ সিএনজিচালিত অটোরিকশা কক্সবাজারের কলাতলী মোড়ে হালকা জ্যামে আটকানো। ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দুলছে। সন্ধ্যা ৬টা ৫৪ মিনিটে সিএনজি ক্রস করল কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগার। এরপর ঘড়ির সময় আর খেয়াল করা হয়নি। একের পর এক বেজে চলেছে মুঠোফোন। আর আমি ব্যস্ত ফোনকলের উত্তর দেওয়ায়।
অটোরিকশা যখন কক্সবাজার রেলস্টেশনের সামনে এসে দাঁড়াল, তখনই হাতে থাকা ১২০ টাকা দিয়ে দিলাম চালককে। এরপর ভোঁ–দৌড়। কয়েক সেকেন্ড দৌড়ানোর পরেই বিশাল শব্দে বাজল ট্রেনের ভেঁপু। আঁচ করতে পারলাম সাতটার ট্রেন এক সেকেন্ডও দেরি করেনি।
মাথায় তখন কী যে ঘুরছিল, তা এখন মনে পড়ছে না। দৌড়ের গতি বাড়ল খানিকটা। মাঝে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুহূর্তে বেরসিক পুলিশ টিকিট চেকের নামে নষ্ট করল প্রায় ৫ সেকেন্ড। প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই চোখ ছানাবড়া। ট্রেন দেখি এক প্ল্যাটফর্ম পরে তার গতি বাড়িয়েই চলেছে। ওভারব্রিজ ধরতে গেলে হয়তো এই ট্রেনে আর বাড়ি ফেরা হতো না। নেহাত বাধ্য হয়েই প্ল্যাটফর্ম থেকে দিলাম লাফ। রেললাইন পেরিয়ে পরের প্ল্যাটফর্মে উঠলাম বেশ কায়দা করে।
ছোটবেলার স্কুল পালানোর বিদ্যা আজ কাজে দিল বেশ; যদিও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্থূলকায় শরীর। প্ল্যাটফর্মে উঠেই দিলাম আবার দৌড়। এ যেন বলিউডের কালজয়ী সিনেমা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র পুনরাবৃত্তি। তবে এবার শাহরুখ বা কাজল নয়, শিহাব জিশানকে সাতটার ট্রেনের একদম শেষ বগিতে তুলে নিতে হাত বাড়িয়ে দিলেন এক পুলিশ সদস্য। ট্রেনে উঠেই আবিষ্কার করলাম একেবারে ঘেমেনেয়ে একাকার আমি। সেই সঙ্গে হৃৎস্পন্দনও বেড়ে গিয়েছে অনেক। হাতেও হালকা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। ততক্ষণে ট্রেন ধরতে পারার খুশিতে এসব আর দেখার সময় কই। জীবন হয়তো মাঝেমধ্যে এভাবেই সুন্দর।
মুহূর্তের গল্পগুলো এভাবে লিখে রাখলেও সবার জন্য সচেতনতার বার্তা একটাই—সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এভাবে তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে উঠতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রতিবছর আহত বা নিহত হন অনেকেই। তাই নিজেকে ভালোবাসুন, সময়ের কাজ সময়ে করুন।
উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা