বৈশাখের দিনগুলো

বৈশাখী মেলাছবি: সাইয়ান

‘মেলায় যাইরে, মেলায় যাইরে, দেখা হবে রে হবে, পহেলা বৈশাখে...’। এসব গান শৈশবের ভালো লাগার একটা অংশজুড়ে আছে। এখনো মনে পড়ে, বাবার কোলে চড়ে প্রথমবার মেলায় গিয়েছিলাম। তখন হাজী আসমত কলেজ প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলা বসত। মেলার মন্ডা-মিঠাই, ঢোল, মাটির ব্যাংক, ঘোড়া এগুলো আমার কেনা লাগবেই। কালের পরিবর্তনে বৈশাখী মেলা এখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নিচে বসে। স্থানীয় ভাষায় আমরা এটিকে মেঘনা ব্রিজ বলি।

মেঘনা নদীর ওপর এখন তিনটি সেতু। সেতুগুলো নদীর ওপারের আশুগঞ্জ আর ভৈরবকে একত্র করেছে। এই সেতুর নিচে বৃহদাকার মেলা বসে প্রতিবছর। বলা হয়, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা হয় এখানে। মেলাকে ঘিরে আছে শত স্মৃতি আর প্রস্তুতির কথা। আগের দিন বাবার সঙ্গে বাজারে যেতাম। বাবা আমাদের জন্য জামা কিনতেন, রাতে মা ভাত ভিজিয়ে রাখতেন, বাবা সকালে উঠেই পান্তা–ইলিশ খেতেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে শোভাযাত্রা দেখে ভাবতাম, বড় হয়ে ঢাকায় গেলে আমিও এই শোভাযাত্রায় অংশ নেব। তখন সাদাকালো টিভিতে চ্যানেল ছিল মাত্র দুইটা। বাঁশের অ্যানটেনা থেকে তার এসে যুক্ত হতো টিভিতে, সকালটা কাটত বৈশাখের বিভিন্ন আয়োজন দেখে।

বিকেলে পরিবারের সবাই মিলে বের হতাম মেলার উদ্দেশে।
একদিনের ঘটনা, মেঘে ঢাকা দিন ছিল। আমরা মেলার দিকে যাচ্ছি, হঠাৎ জোরে বাতাস বইতে শুরু করে। ধুলায় চারদিক একাকার। বাবা আমাকে কোলে নিলেন, মায়ের কোলে ছোট বোন জেরিন। নানুসহ আমরা সবাই দৌড়ে বাসায় ফিরি। বৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব দেখেছিলাম সেদিন।

মেলার বিশেষ আকর্ষণ ছিল নাগরদোলা ও পুতুলনাচ। পুতুলগুলো কীভাবে নাচে, কে নাচায়, এটা ছিল তখন বিস্ময়। নাগরদোলায় ছিল এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। ওপরে ওঠার সময় বেশ মজা লাগত, নিচে নামার সময় বুক দুরুদুরু করত। আমাদের নাগরদোলায় উঠিয়ে বাবা নিচ থেকে সাহস দিতেন যেন ভয় না পাই।

মেলা থেকে ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে উঠতাম। কেউ ক্রিকেট ব্যাট কিনত, কেউ বন্দুক, কেউ খেলনা ঠেলাগাড়ি। গাড়ির এক মাথায় সুতা ধরে হাঁটলে ঢোল বাজত। আমরা কজন এই ঠেলাগাড়ি নিয়ে সারা দিন দৌড়াতাম। বন্দুকে পুঁতি ভরে একে অপরের দিকে গুলি করতাম। সবকিছুর ঊর্ধ্বে পছন্দ ছিল ওয়াটার গান। ওটার ভেতর পানি ভরে গুলি করার মধ্যে কী যে আনন্দ লাগত! সারা দিন নানা জিনিসে পানি দিয়ে গুলি করতাম।

দীর্ঘ চার বছর পর আবার হচ্ছে বৈশাখী মেলা। সময়ের পরিবর্তনে মেলায় এসেছে নতুনত্ব ও আধুনিকতা। বৈশাখ আনন্দের বারতা নিয়ে আসুক সবার জীবনে।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা