সেদিন মধ্যরাতে শহরে লোডশেডিং চলছিল। শহরজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিশ্চুপ ও নিস্তব্ধ চারপাশ। নিজ কক্ষের বারান্দায় নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে তৃণা। হঠাৎ ভীষণ মন খারাপ। কী কারণে তার মন খারাপ, তা জানা নেই।
তবে তৃণার মতো হরিণী চোখের মেয়েদের চোখ দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারি, ওর নিশ্চয়ই আজ জন্মদিন। হুম... না! তার জন্মদিন গত ১৮ মে ছিল। এই তো সেদিন তার জন্মদিনে তাকে দুই জোড়া রেশমি চুড়ি, তার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম’ ও পাঁচটি কিটকেট গিফট করেছিলাম। সে খুশী হয়েছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ মন খারাপের কারণ? আমি কি গিয়ে জিজ্ঞাসা করব? কীভাবে জিজ্ঞাসা করব! সে তো আমাকে দেখতেই পারছে না। সিনেমায় দেখেছিলাম নায়িকা নাকি তার নায়কের মৃত আত্মাকে দেখতে পায়। তার সঙ্গে সারা দিন কথা বলে, তাকে তার সঙ্গে রাখতে দেয়। কিন্তু আমার কেন তৃণাকে দেখার সুযোগ থাকলেও কথা বলার সুযোগ নেই?
‘ঠিক আছে, কাট!’ এই বলে নাটকের এই অংশটুকু সমাপ্তির ঘোষণা দিলেন পরিচালক স্বপন চৌধুরী। তার এবারের নাটকের নাম ‘তুমি, আমি এবং আমি’। নাটকে সৌরভ চরিত্রে অভিনয় করছে জনপ্রিয় অভিনেতা তানভীর রেজা এবং তৃণা চরিত্রে অভিনেত্রী শুভ্রা জাবিন। বাংলা নাটকের এই তরুণ জুটিকে দর্শকেরা খুব পছন্দ করে। তবে আজ শুভ্রা জাবিনকে দেখতে কেন জানি সত্যিই মন খারাপ লাগছিল। তাই শুটিংয়ের এক ফাঁকে অভিনেতা তানভীর তার দুই হাতে দুই কাপ চা নিয়ে শুভ্রার কাছে যেতেই জিজ্ঞাসা করল—‘কী ব্যাপার! মন খারাপ নাকি?’
শুভ্রা নিশ্চুপ হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর হাতে থাকা ফোনের একটি মেসেজ তানভীরকে দেখাল। মেসেজটি দেখতেই তানভীর চমকে উঠল। সেখানে লেখা—
শেষটায় ভালো থাকতে দিলে না। তোমার জীবন আরও সুন্দর হোক। আমার মৃত্যুর পর আমার আত্মা তোমার দেখা দেবে। কিন্তু তুমি দেখতে পাবে না। বিদায়।
ইতি
তমাল।
লেখাটি পড়ামাত্রই তানভীর কিছুটা অবাক হয়ে শুভ্রাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘সেই এক বছর আগের মেসেজ আর আজ মনে হচ্ছে তমালের চরিত্রটি আমি বহন করছি। অদ্ভুত!’ এটি বলে মেকআপ রুমে চলে গেল সে।
শুভ্রা মাথা নিচু করে বসে আছে। একটু পরপর দুই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। শুধু ভাবছে, অতীতে তমালের সঙ্গে তার সম্পর্কটি আজকের দিনে ভালো একটা রূপ নিতে পারত। কিন্তু শুভ্রা তখন যশ–খ্যাতি পাওয়ার লোভে ভালো কিছু হারিয়ে ফেলেছিল। তমাল আজ আর ফিরবে না। যে চলে যায়, সে হয়তো সারা জীবনের জন্য চলে যায়। কেউ কেউ ফিরে আসে, আবার কেউ ফিরে আসে না। এই পৃথিবীতে কিছু ফেলা আসা স্মৃতির রেশ রয়ে যায়। তবে অবহেলার স্মৃতিটুকু একদিন কীভাবে যেন মিলে যায়।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা