ঘরে ফেরা

সন্ধ্যা নেমে এলেও বাড়ি ফেরা হয় না। প্রতীকীফাইল ছবি
প্রতিদিন পথ চলি, প্রকৃতিকে জিজ্ঞেস করি, ‘আমার কি আর ঘরে ফেরা হবে না?’

বইতে পড়েছিলাম, মানুষ প্রকৃতিতে বাঁচে। আজ জীবনের এই পর্যায়ে এসে লাইনটির মর্মার্থ বুঝতে পারছি। দূষিত এই পৃথিবীতে যেখানে মানুষের মন কলুষিত, প্রকৃতি সেখানে মায়াবী আশ্রয়স্থল। নীলরঙা, সাদা মেঘপুঞ্জ আকাশের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেওয়া যাবে জীবনের দীর্ঘ সময়।

তবে জীবন আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে না, পথ চলতে হয়। বারবার ভেঙে গিয়ে টুকরোগুলো নিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় জোড়া লাগানোর আশায়। ছুটে চলেছি। নিজের অজান্তেই অনেকখানি বদলে গিয়ে নিজেকে শামুকের খোলসে আবৃত করে নিয়েছি। মাঝেমধ্যে খোলস থেকে বের হয়ে দেখি। বুঝলাম, শক্ত খোলসই শ্রেয়। তবু জাগতিক নিয়মে ভাঙা-গড়ার লড়াই করে, আপনজনকে দূরে সরিয়ে একা ছুটছি। সফলতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা? না, এখন শুধু শান্তি চাই। নিশ্চিন্তে অন্তত একটি রাত ঘুমিয়ে পরদিন সকালের মিষ্টি রোদ দেখতে চাই। ছুঁতে চাই কিছু মোহ।

একাডেমিক হিসেবে পার করেছি একটি বছর। অথচ ক্যালেন্ডার গুনে দেখলাম, জীবন থেকে এক বছর সাত মাস পার করেছি একা এই ইফেস্কুর পথে। প্রতিদিন পথ চলি, প্রকৃতিকে জিজ্ঞেস করি, ‘আমার কি আর ঘরে ফেরা হবে না?’ প্রকৃতিও যেন হাহাকার করে, দীর্ঘশ্বাস হয়ে হাওয়া বয়ে যায়। আকাশ ফেটে যেমন বিদ্যুৎ চমকায়, তারপর তুমুল ঝড় আসে, বৃষ্টি পড়ে। আকাশের মতো মন খারাপের বাঁধ ভেঙে আমার চোখেও বন্যা বয়ে যায়। চোখ মুছে আবার পথ চলি। অল্পতেই অনেকখানি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। বারবার মনে প্রশ্ন জাগে, ‘আমার কি আর ঘরে ফেরা হবে না?’

শিক্ষার্থী, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়