সেই প্রিয় মুখের মায়া

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

একটা মেয়ের সঙ্গে প্রণয় ছিল দুই বছরের মতো। তাকে কতটা ভালোবাসতাম, তা জানা নেই। তবে আমার কল্পনা এবং বাইরের জগৎজুড়ে যে শুধু সে–ই ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। সম্পূর্ণ অকিঞ্চিৎকর কারণে যখন সে আমায় ছেড়ে চলে গেল, চারপাশে তাকিয়ে আবিষ্কার করলাম, আমি সম্পূর্ণ একা। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এমনকি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছিলাম দু-একবার। কিন্তু কাপুরুষ হিসেবে পরিগণিত হওয়ার সম্ভাবনা আমাকে পৃথিবী ত্যাগ করতে নিরুৎসাহিত করেছে সব সময়। সৌভাগ্যক্রমে কিছু বন্ধু আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। আমি আবার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকি।

কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সংগত কারণেই সময়টা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর জন্য যতটুকু মানসিক স্থিতি থাকা দরকার, তা আমার ছিল না তখন। প্রতিদিন মাথা নিচু করে ক্লাসে যেতাম, আবার মাথা নিচু করেই ফিরে আসতাম। কারও সঙ্গেই পরিচয় ছিল না। কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার উৎসাহও ছিল না। স্বাভাবিক কারণেই মেয়েদের প্রতি একটা তীব্র বিতৃষ্ণা কাজ করত। তাই মেয়েদের দিকেও তাকাতাম না। ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের পাশের টংদোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটা বেনসন ধরাতাম, আর ওটা শেষ করে বাসায় ফিরে আসতাম।

প্রতিদিনের মতো একদিন টংদোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম, তখন অনন্যাকে প্রথমবার দেখতে পাই। কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়েছিলাম। তার নিবিড় কালো চোখ, দীর্ঘ পল্লব, মায়াময় চাহনি ও মৃদু হাসি—আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। কোনোমতে বাসায় ফিরে এলাম ওই দিন। বাসায় ফেরার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই সত্যি সত্যি আমার গা কেঁপে জ্বর চলে আসে।

অনন্যার কালো চোখ দুটি সেই যে আমার মনে জেগে রইল, একমুহূর্তের জন্যেও আর নিস্তার পাইনি। চোখ খোলা রাখি বা বন্ধ রাখি, শুধু তার চোখ দুটিই দেখতে পাই। তার হাসি, গালের মৃদু টোল আমার রাতের পর রাত জেগে থাকার কারণ হিসেবে স্থির হয়ে গেল। সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন (ক্লাস থাকুক আর না–ই থাকুক) ঘণ্টার পর ঘণ্টা টংদোকানে দাঁড়িয়ে থেকেছি শুধু একবার তাকে দেখার জন্য। যেদিন তাকে দেখতাম, চারপাশের সব যেন অদৃশ্য হয়ে যেত! নিশ্বাস ভারী হয়ে যেত, বুকে একটা অন্য রকম ব্যথা অনুভব করতাম। ভালো লাগার অনুভূতি এত তীব্র হওয়ার কথা নয়, এটা ভালোবাসাই হবে হয়তো।

জানি না কখনো তার সামনে দাঁড়াতে পারব কি না। তবে একজন জীবনবিমুখ ছেলে যে সব সময় তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই!