এসডিজি রচনা প্রতিযোগিতা (দ্বিতীয় স্থান)

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট
ছবি: সংগৃহীত

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৩- জলবায়ু কার্যক্রম

‘জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত, সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান’

সংকেতসমূহ: ভূমিকা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ও বাংলাদেশের বিপদাপন্নতা, জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে করণীয় পদক্ষেপ, সামাজিক সচেতনতা ও সম্ভাব্য সমাধান, উপসংহার।

ভূমিকা

সাধারণভাবে কোনো স্থানের ২৫-৩০ বছরের বেশি সময়ের আবহাওয়া অর্থাৎ বায়ু, তাপ, চাপ, গতি, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি আবহাওয়া উপাদানসমূহের গড়কে জলবায়ু বলা হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর এই পরিবর্তনই প্রকৃতি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। আর জলবায়ুর পরিবর্তন কেবল বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়। এটিকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। অন্যথায় জলবায়ু পরিবর্তন জীবজগতের বসবাসের অনুপযোগী হওয়ার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায়—
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর কাছে বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ

আমরা জানি, পৃথিবীতে প্রতিদিন যে সূর্যকিরণ পতিত হয় ভূপৃষ্ঠ তা শোষণ করে নেয়। শোষিত সূর্যকিরণ আবার মহাশূন্যে বিকিরিত বা প্রতিফলিত হয়। প্রকৃতির এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মের এই শোষণ বিকিরণ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেই জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। জলবায়ুর পরিবর্তন মূলত হয়ে থাকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা Global Warming নামে পরিচিত।

এটিকে গ্রিনহাউসের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। এ জন্য দায়ী গ্যাসগুলো যেমন কার্বন ডাই–অক্সাইড (CO2), ক্লোরো-ফ্লোরো কার্বন (CFC), মিথেন (CH4), ওজোন (O3), জলীয় বাষ্প (H2O) প্রভৃতির অত্যাধুনিক ঘনত্ব বৃদ্ধিই জলবায়ুর পরিবর্তনকে শাণিত করে। জলবায়ুর এই পরিবর্তন তথা উল্লিখিত ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ—

১) জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার।
২) যানবাহনের অদগ্ধীভূত কার্বন যেমন কার্বন মনোক্সাইড (CO), কার্বন ডাই–অক্সাইড (CO2), সালফার ডাই–অক্সাইড (SO2), নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড (NO2)।
৩) শিল্পকারখানা হতে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যের স্তূপ।
৪) অপরিকল্পিতভাবে ব্যাপক হারে বনাঞ্চল ধ্বংস এবং বনভূমি এলাকায় বিস্তৃত দাবানল।
৫) ওজোন স্তর ক্ষয় এবং পরিবেশে তেজস্ক্রিয় দূষণের বৃদ্ধি।
৬) মানুষের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য প্রস্তুত বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী (যেমন এয়ারকন্ডিশনার, প্রসাধন ও প্লাস্টিক সামগ্রী প্রভৃতি)।
৭) জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধি ও অসম বণ্টন।
৮) কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ।
৯) এ ছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ।

অতি সাম্প্রতিক কালের গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত কুমেরু ও হিমালয়ের বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। আর এভাবেই জলবায়ুর সাম্যাবস্থা দিন দিন ভেঙে যাচ্ছে। অতিবৃষ্টি, বন্যা, শহরে জলাবদ্ধতা, বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ পৃথিবীর জলবায়ু অতীতেও পরিবর্তিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও পরিবর্তিত হবে বলে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ও বাংলাদেশের বিপদাপন্নতা

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, যার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এ দেশের মাঝবরাবর কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, আবহাওয়া ও জলবায়ু প্রকৃতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে পৃথিবীর স্বাভাবিক আচরণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য। বিশেষত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অধিক জনসংখ্যার চাপ, মানুষের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর, প্রাকৃতিক ও শক্তি সম্পদের ওপর অধিক চাহিদা প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর প্রভাব ফেলছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের দরুন নগরের আলিশান চেহারার মধ্যে ফুটে উঠেছে দগদগে ঘা।
সবুজ পাগল হয়ে বুঝি-বা সখেদে আওড়ায় রবীন্দ্রনাথের আর্তি- ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর।’

মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব এ দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন শুষ্ক এবং প্রায় শুষ্কভূমির পরিবেশ, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় পরিবেশ, কৃষি-বন-দ্বীপ-পর্বত-মেরু পরিবেশ নষ্ট করছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে বাংলাদেশের মানুষও আজ ঝুঁকিপূর্ণ দিনাতিপাত করছে। ইতিপূর্বে সাতজন নোবেলজয়ী সাম্প্রতিক কালে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা সত্যি হলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রায় ১২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ফলে কোটি কোটি মানুষ হবে পরিবেশ শরণার্থী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং পৃথিবীব্যাপী জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে তার ধারাবাহিকতায় এ দেশেও ইতিমধ্যে কিছু কিছু নমুনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ষড়্ঋতুর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋতুর আগমন এবং প্রস্থানের সময়কালের সামান্য পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন বাংলাদেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও আশ্বিন মাসেও কখনো কখনো ভারী বৃষ্টিপাত এবং অসময়ে বন্যা দেখা দেয়। এতে চিংড়ির ঘের তলিয়ে যাচ্ছে এবং বহু মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল থাকলেও ফাল্গুন ও চৈত্র মাস পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হয় বিধায় লেপ, কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে হয়। মূলত গ্রীষ্মকালে অস্বাভাবিক গরম এবং শীতকালে অসহনীয় শীত পড়ে, যা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঋতু পরিবর্তনেরই শামিল। আবার প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলে এবং স্থানিক বিচারে তা সমভাবে বণ্টিত না হলে মরুময়তা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলে খরার প্রকোপ দেখা যায়। আবহাওয়ার তারতম্যে দেশের অনেক কৃষিজমিই হারানোর আশঙ্কা বিদ্যমান। বিশেষ করে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে উদ্ভূত এই খরায় ধান, গম, আলু, ভুট্টাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও ফসলের উৎপাদন বিপুলাংশে ব্যাহত হতে থাকবে। আর উৎপাদন ব্যাহত হলে খাদ্য নিরাপত্তাও অচিরেই বিঘ্নিত হবে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ প্রধান খাদ্য ধান উৎপাদনে প্রায় স্বাবলম্বী। জলবায়ুর মৃদ্যু পরিবর্তনই খরার ব্যাপ্তি এবং খরাকবলিত এলাকার পরিধি বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা যেন এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালের বন্যা ছিল প্রলয়ংকরী, যেখানে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনে ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা ও এর পৌনঃপুনিকতা বাড়বে। এতে দুর্যোগ–পরবর্তী কলেরা, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা সংক্রামক রোগ বেড়ে যাবে। মূলত অতীতে অ্যানথ্রাক্সের মতো অনেক প্রাণঘাতী রোগজীবাণুর প্রকোপ ছিল। ১৯৭০–এর ১২ নভেম্বর, ১৯৯১–এর ২৯ এপ্রিল এমনিভাবে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছিল, এখনো হওয়ার পরিক্রমায়।

আইপিসিসি–এর তথ্যানুযায়ী, ২০৩০ সালের পর এ দেশের প্রধান প্রধান নদীর প্রবাহ অনেক কমে যাবে। উপকূলীয় জোয়ার–ভাটার স্রোত, বন্যা, নদী ক্ষয়, লবণাক্ততার দ্বারা উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। নদীর ক্ষীণ প্রবাহের কারণে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেবে, তীব্র বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি স্বাদুপানির মৎস্যসম্পদের নিদারুণ ক্ষতিসাধনও করবে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে পূর্বের মতো দেশীয় মাছ এখন আর পাওয়া যাবে না। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি ট্যাগটি আজ আর সেভাবে উচ্চারিত হতেও দেখা যায় না। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের উপকূলীয় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ১৩% কৃষিজমি লবণাক্ততার শিকার হয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ তা ১৬% এবং ২১০০ সাল নাগাদ তা ১৮%–এ পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ ঝুঁকি এলাকা বা দেশগুলোর একটি, যার মূলেও রয়েছে জলবায়ুর এই ব্যাপক পরিবর্তন। দেশের রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে তাই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, মারা যেতে পারে লাখ লাখ মানুষ। এ ছাড়া ধারণা করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে ৩০ শতাংশ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বন ও জলবায়ুবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে ১২৫টির মতো বৃক্ষ প্রজাতি বিপন্নপ্রায় এবং ৩৯ প্রজাতির প্রাণী হুমকির সম্মুখীন।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে করণীয় পদক্ষেপ, সামাজিক সচেতনতা ও সম্ভাব্য সমাধান

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলছে, আমরা তখন বসে।’
কিন্তু সর্বাধুনিক বিশ্বে এখন আর বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। পরিবেশ ও প্রতিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে জলবায়ুর সংকট রোধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করাটা বড্ড জরুরি। ইতিমধ্যেই জলবায়ুর পরিবর্তনের সামগ্রিক বিষয়টি রাষ্ট্রীয়, এমনকি বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের জীবন রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলো ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হ্রাসের লক্ষ্যে বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে।

ডব্লিউআরআই (ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট)–এর মতে, বিশ্বের বনভূমি উজাড় হতে হতে অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে বিশ্ব পরিবেশকে হুমকির হাত থেকে রক্ষা ও মানুষের বসবাসের উপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী তৈরিতে গাছপালার কোনো বিকল্প নেই।
শ্রী চৈতন্য–এর মতে, গাছের মতো হও। যে তার শাখা কেটে দেয় এমনকি তাকেও সে ছায়া দেয়। সত্যিই তাই। ভূমণ্ডলের ক্রমউষ্ণায়ন প্রতিরোধ করতে সাধারণ বৃক্ষনিধন বন্ধ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বনায়নের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা সময়ের দাবি। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণের প্রতি ইসলামও অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং বলেছেন, ‘যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তেও তোমাদের কারও হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহলে সে যেন সেই বিপদসংকুল মুহূর্তেও তা রোপণ করে দেয়।’

জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে ওজোনবান্ধব গ্যাস ব্যবহার করা উচিত। উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দ্বারা বায়ু, পানি এবং স্থল দূষণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনা যেতে পারে। বিশ্বের সামগ্রিক ভূমি ব্যবহার পরিবেশসম্মত করতে হবে, পরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু প্রাকৃতিক জলাশয় উষ্ণায়ন প্রতিরোধ করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার সহায়ক ভূমিকা পালন করে, সেহেতু প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট প্রতিরোধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাকৃতিক জ্বালানির পরিমিত ব্যবহার এবং যানবাহন ও শিল্পকারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার ক্ষতি কমানোর প্রতি নজর দিতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ুঝুঁকি কমাতে পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ড সর্বাগ্রে বন্ধ করা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি যেমন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ব্যানার, ফেস্টুন, র‍্যালি ইত্যাদি গ্রহণের পাশাপাশি জাতি-বর্ণ-ধর্ম-দলমতনির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ সবাইকে এখনই সজাগ হতে হবে এবং একযোগে কাজ করে যেতে হবে। জনগণ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব কর্মসূচিতে যোগ দেয়, সে জন্য প্রয়োজনে অর্থনৈতিক প্রণোদনা থাকতে হবে।

উপসংহার

জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে সর্বাঙ্গীনভাবে বিবেচনায় রেখে অন্তত আমরা গাছ লাগাব। সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় ‘কমিউনিটিভিত্তিক বনায়ন কর্মসূচি’–এর আয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনের পথকে রুদ্ধ করার প্রথম ও প্রকৃষ্ট একটি উপায়ই বটে। আগামীর সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা সম্ভবপর হলে তা ‘দেশ ও জাতির উন্নয়ন প্রচেষ্টার সুস্থ চালিকা কেন্দ্র’ হিসেবে পরিগণিত হবে অচিরেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশদূষণ, খাদ্যাভাব, কর্মসংস্থানের সংকটসহ প্রভৃতি নানা সংকটের আবর্তে পৃথিবী এমনিতেই নিপতিত। সর্বোপরি, উষ্ণায়ন এবং তৎসৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে—এ কথা বলা বাহুল্য।

শিক্ষার্থী, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ