মিত্তির

অলংকরণ: তুলি

চট্টগ্রামে সেদিনের আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন। মাইকের আওয়াজ শোনা যায়। তোড়জোড় করে শাটল থেকে নেমে পড়ে মিত্তির। স্টেশনে শুয়ে থাকে তিনটা কুকুর। মিত্তির এদের ডাকে হারাধনের তিন পুত্র সম্বোধনে। মিত্তির রাস্তা পার হয়। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির দিনে শহরের নালাভর্তি পানি, সঙ্গে আবর্জনা। এসবের দিকে তার চোখ যায়। রাস্তার পাশে টংদোকানে একটা অপরিচ্ছন্ন নেশাখোর ছেলে সিগারেট খেতে খেতে তার দিকে তাকায়। স্যান্ডেল পায়ে মিত্তির এগিয়ে যেতে থাকে নালার পাশ দিয়ে, নাকে এসে লাগে তীব্র পচা গন্ধ।

সুগন্ধা আবাসিকের ২ নম্বর রোডে সোসাইটি পার্কের সামনে এসে মিত্তিরের জুতা ছিঁড়ে যায়। সামনে থাকা ষোলো বছরের মেয়ে নিজস্ব গাড়িতে বসে হেসে দেয়, মিত্তির বিব্রতবোধ করে। মেয়েটা জানালার কাচ তুলে সেই স্থান ত্যাগ করে। এগিয়ে যেতে যেতে ফ্যামিলি সুপার শপের সামনে গিয়ে মিত্তিরের চোখে পড়ে একটা লালচে খয়েরি রঙের কেচু। একটু আগে যে মেয়েটির সঙ্গে প্রথম দেখা হলো, সে কেচুটিকে মেয়েটার সঙ্গে তুলনা করল মনে মনে। এ কথা অবশ্য তৎক্ষণাৎ বলার মতো কেউ নেই। চুপচাপ ১৭২ নম্বর বাসাটার লিফটে উঠে ষোলো বছরের মেয়েটার কথা মনে হয়। মেয়েটার হাসি খুবই বিচ্ছিরি, মিষ্টিকুমড়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়। মিত্তিরের সব থেকে অপছন্দের সবজি মিষ্টিকুমড়া।

ছাত্রীকে পড়িয়ে মিত্তির রাস্তায় একা হাঁটে খালি পায়ে। তখন অন্ধকার। রাস্তার লাল-নীল বাতিগুলোর প্রতিবিম্ব পায়ে এসে পড়ছে। মিত্তির হাঁটে…।

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরের সরু রাস্তাটায় মিত্তির হাঁটতে হাঁটতে ৯ বছর আগের কথা ভাবল কিছুক্ষণ। বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই সেদিনের সেই মিষ্টিকুমড়ার মতো দেখতে মেয়েটা দরজা খুলে জিজ্ঞেস করল, আজ এত দেরি হলো, বৃষ্টি ছিল? বেলি ফুলের মালা আনলে না যে?

বন্ধু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা