তাঁদের প্রথম দেখা, বিয়ে দিয়েই শুরু হয়েছে। প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এসেছে দুজনের পরিবার, পূর্বপ্রজন্ম তথা বংশপরিচয়।
অনেক দিন পর আজ ভোরবেলা সূর্য ওঠা দেখা হয়েছে। প্রাতর্ভ্রমণ শেষে পাতা ওলটাতে ওলটাতেই ছোট্ট এই বইটি শেষ হয়ে গেল।
ব্যক্তিগতভাবে সব সময়ই জীবনানন্দে তুমুল প্রভাবিত এবং ভীষণ আগ্রহ বোধ করি। সেই আগ্রহের রেশ ধরেই বইটি এক আলোকবাহী মানুষের কাছ থেকে ধার পাওয়া। সে আরেক ইতিহাস। যাকগে, বই সম্পর্কে আসা যাক—
‘পেনসিলটি দেখলে স্মৃতির আলোড়নে কত কথাই ভেসে আসে। জগতে জড় পদার্থের মূল্য কতটুকু! কিন্তু যার জন্য সেই জড় পদার্থ অমূল্য হয়ে ওঠে—যাকে নিয়েই স্মৃতির আলোড়ন—থাকে না সেই মানুষ। ভাঙা-গড়ার কাজে বিধাতা পুরুষ মানুষের মন নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলেছেন। যে মনে চেতনা দিয়েছেন বলেই মানুষ আজ শ্রেষ্ঠ জীব—আবার সেই মনকেই ভেঙে গুঁড়া করে দিয়ে প্রিয়জনকে টেনে নিয়ে যেতে একটুও বাধছে না। বিধাতার এ কী খেলা!’
—‘মানুষ জীবনানন্দ’ বইটিতে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে উল্লিখিত বাক্যগুলো লিখেছেন কবিপত্নী লাবণ্য দাশ। বইটিতে কবি বা সাহিত্যিক নয়, সন্তান হিসেবে, পিতা হিসেবে, স্বামী হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে—সর্বোপরি মানুষ হিসেবে জীবনানন্দ দাশ আসলে কেমন ছিলেন, তা নিয়েই সংক্ষিপ্ত এবং সাবলীল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন লাবণ্য দাশ।
তাঁদের প্রথম দেখা, বিয়ে দিয়েই শুরু হয়েছে। প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এসেছে দুজনের পরিবার, পূর্বপ্রজন্ম তথা বংশপরিচয়। স্নেহ-মায়া, ভীষণ দায়িত্ববোধ এবং শীতলতম দাম্পত্য সম্পর্ক। সন্তানদের প্রতি প্রবল ভালোবাসা, মাতৃভক্তি, শিক্ষার্থীদের প্রতি অপার স্নেহ এবং বন্ধুমহলের গল্পের খবরাখবর। একই সঙ্গে দেশভাগ এবং এর প্রভাব। ভীষণ চাপা এবং নির্মোহ ব্যক্তিত্বের আড়ালে আসলে কেমন ছিলেন জীবনানন্দ? সেই ব্যাখ্যাই বর্ণিত হয়েছে অকপটে।
প্রবল আগ্রহ থাকায় জীবনানন্দ সম্পর্কে কিছু প্রবন্ধ, গবেষণাকর্ম তথা বই পড়া হয়েছিল আগে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, দাম্পত্য টানাপোড়েনের দিকগুলো পুরোটাই এই লেখায় এড়িয়ে গেছেন লাবণ্য দাশ। খুব সচেতনভাবেই গভীর আলোচনায় যেতে চাননি তিনি। হয়তো কবির মৃত্যুর পর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সাংসারিক তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো সামনে আনতে আগ্রহবোধ করেননি। মৃত্যুর পর কবির প্রথম উপন্যাস প্রকাশে বাধা দেওয়া, কিছু লেখা প্রকাশে প্রবল অনীহা তো সেসবেরই ইঙ্গিত দেয়। যদিও পরবর্তী সময়ে অপ্রকাশিত লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে। রীতিমতো গবেষণা হয়েছে। এখনো হচ্ছে।
ততটা গভীর না হলেও ভাসা ভাসা বর্ণনাতেও চাপা ব্যক্তিত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা একজন স্নেহপূর্ণ মানুষকে জানতে লাবণ্য দাশের ছোট্ট বইটি দারুণ ভূমিকা পালন করে। পড়তে বেশ ভালোই লেগেছে।
বন্ধু, কুড়িগ্রাম বন্ধুসভা