তোমার মনে আছে প্রথমবার দেখা করার পর এসে তোমার ফোনে একটা খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলাম?
সম্ভবত মনে নেই, থাকার কথাও না। জলজ্যান্ত একটা মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তোমার স্মৃতি হতে; আর তো নিছক একটা মুঠোফোনে পাঠানো বার্তা! তবে আমার স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন তোমাকে বলেছিলাম ‘মূর্তমান কবিতা’।
হায় আমার কবিতার মূর্তি! তোমাকে আমি আমৃত্যু রচনা করে যেতে চেয়েছিলাম। তুমি বসন্তের সমীরণ হয়ে এলে, মোহনীয় গন্ধে মাতিয়ে মিলিয়ে গেলে। ওহে শিউলি, আমার শরৎ নিশীথের দুঃখ! ক্ষণিকের তরে ওমন মায়া ছড়ানোর কীই–বা মানে ছিল? তোমাতে আমাতে ভৌগোলিক দূরত্ব নগণ্য। তবু আর কখনো ছুঁয়ে দেখা হবে না আমার কবিতার মূর্তি। আমাদের মধ্যকার ১২০ কোটি আলোকবর্ষের দূরত্ব আর কখনো ঘুচবে না।
জারুলগাছের নিচে বসে তুমি আমার কাঁধে যেদিন প্রথমবার মাথা রাখলে, সেই দিনটার কথা মনে আছে কি তোমার? সম্ভবত ভুলে গেছ তুমি। তবে আমার বেশ মনে আছে; সেদিনকার স্মৃতি এখনো আমায় উদ্বেল করে, সেই মায়াময়রূপ, স্নিগ্ধ চাহনি, মিষ্টি হাসি। আমার কবিতার মূর্তি! আমি কী করে ভুলব বলতে পারো?
কিন্তু জগদীশ্বর নিয়তির খাতায় ভিন্ন কিছু লিখে রেখেছেন হয়তো। হয়তো বিচ্ছেদ তোমার পক্ষে কল্যাণকর! তুমি সরে গেছ আমার বিনিদ্র রজনীগন্ধার মালা ছিন্ন করে, প্রেমমালঞ্চ দলিতমথিত করে আমার প্রাণের ’পরে তুমি চলে গেছ সুদূরে। যখন তোমাকে লিখছি তখন রাত্রি শেষ প্রহরে—
‘পৃথিবী ঘুমন্ত, হয়তো তুমিও;
অথবা বনে গেছ সুরঞ্জনা!
তুমি সরিয়ে নিয়েছ নিজেকে, চেয়েছ মুক্তি।
তবে তা–ই হোক, বিজয়ী হোক তোমার ইচ্ছে
আজকে রচিত হোক আমাদের স্মৃতির কবর!
তুমি আমার জন্য তোমার যাবতীয় ঠিকানা নিষিদ্ধ করেছ, তাই আকাশের ঠিকানাতেই পাঠালাম তোমার তরে আমার শেষ বার্তা।
এ আমার শেষ লেখা, তোমার জন্য লেখা আমার সর্বশেষ পঙ্ক্তি...
তোমার স্মৃতি হতে আমার শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুও মুছে দিলাম প্রিয়তমা
আমার কাছে রেখে দিলাম তোমার দানের মালা।
আমায় যখন ভালোবাসোনি, তবে তোমার স্মৃতি হতে মুছে দাও সে দূষিত দাগ
যখন হৃদয়েই স্থান না পেলাম, তখন স্মৃতির বাক্সে অবহেলা আর অযত্নে আমায় ফেলে রেখো না।
তোমার শুভাশিস হয়েই বলছি, ওসব মুছে দাও
না হয় সময়ের পরিক্রমায় সেসবই বিষাক্ত কাঁটা হয়ে তোমায় যাতনা দেবে।
আমি চাই না অশুভ স্মৃতির কাঁটা ফুটে তোমার হৃদয় রক্তাক্ত হোক,
আমি চাই তোমার বাগান আবার সিক্ত হোক শেফালির শিশিরে।’