সুদীপ্ত,
তোমার মনে পড়ে?
তোমার আমার প্রথম দেখা হয়েছিল পহেলা ফাল্গুনে,
সেই বসন্তেই পরিচয়।
বসন্তদিনেই হয়েছিল হৃদয়ের আদান-প্রদান।
মনে নেই বুঝি!
আচ্ছা বলো তো! সবই কি ভুলে গেলে হয়?
কিছু কথা...কিছু স্মৃতি...
সে তো হৃদয়ের কোণে স্থিরচিত্রের মতো আমরণ নির্বাক চেয়ে রয়।
অবশ্য তোমার যা ভুলোমন!
একটু আগের কথাটাও ভুলে যাও এখন।
আর আড়াই যুগ আগের কথা, সে তো তোমার মনে থাকারও কথা নয়!
জানো সুদীপ্ত! আমাদের সম্পর্কের আজ ত্রিশ বসন্ত পার হয়ে গেল...
আজ পহেলা ফাল্গুন।
জানি, তুমি হয়তো তা–ও জানো না।
কিন্তু, কেন জানি না সেদিনের কথাগুলো আজও আমার বড্ড মনে পড়ে।
বাসন্তী রঙের শাড়ি, লাল টিপ ও রেশমি চুড়ি পরে, খোঁপায় গাঁদাফুল গুঁজে, কালো দুটো হরিণী চোখে গাঢ় কাজল এঁকে, নূপুরের নিক্কণ তুলে এগিয়ে গেলাম....
বান্ধবীর বাসার কলিং বেল টিপতেই,
তুমি দরজা খুলে সামনে দাঁড়ালে।
সেই তো প্রথম চোখাচোখি!
তুমি বলতে, আমার রূপ এতটাই মোহনীয় যে,
প্রথম দেখাতেই নাকি সে রূপ তোমার মনের আয়নায় ছায়া ফেলেছিল।
আমাদের পরিচয় হলো, প্রেমও হলো খুব গভীর।
অতঃপর বিয়ে...
বিয়ের পরপর তুমি প্রতিটা শাড়ির সঙ্গেই মায়ের পছন্দের রেশমি চুড়ি মিলিয়ে কিনে আনতে।
অফিস থেকে ফেরার পথে ফুল এনে নিজেই আমার কুন্তলে গুঁজে দিতে।
কী যে ভালো লাগত!
বহুদিন ধরে তুমি আর আমার জন্য তেমন কিছু কিনে আনো না।
অভিমান করলে মান ভাঙাতেও আসো না আর।
সময় আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে মিষ্টি প্রণয়াবেগ।
তাই হয়তো দুজনার অনুভূতিগুলোও আর বসন্তের ফুল হয়ে ফোটে না!
তাই বুঝি প্রেমপ্রীতি, মান-অভিমান, কিংবা অনুরাগের ছায়াও
এখন আর আগের মতো তুমি পড়তে পারো না আমার মুখাবয়বে।
জানো সুদীপ্ত,
কোথায় যেন ছেঁড়া একটি চিরকুটে পড়েছিলাম...
প্রেম যখন প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়,
ভালোবাসার মানুষটি তখন অভ্যাসে রূপান্তরিত হয়।
তখন আর তাকে এতটা খেয়াল করে পর্যবেক্ষণের দরকার হয় না।
এতটুকুই পড়েছিলাম, শেষের কথাটুকু চিরকুটের ছেঁড়া অংশে ছিল হয়তো! বাকিটা পড়া হয়নি।
তবে তুমি জানো না সুদীপ্ত , আমার না খুব করে জানতে ইচ্ছে করে...
এমন অবহেলায় কি প্রেম বেঁচে থাকে!
এতটা অবহেলা ঘৃণার দেয়াল হয়ে
কোনো একসময় কি ভালোবাসাকে আড়াল করে দাঁড়ায় না!
ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে...
ইতি
তোমার সুপ্রভা