স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ এক লেখক আহমদ ছফা
আহমদ ছফার সাহিত্য বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির দর্পণ হিসেবে বিবেচিত। নিজের লেখায় ও ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন প্রথাবিরোধী, স্পষ্টবাদী ও স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গির। বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় তিনি ছিলেন অনন্য।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আহমদ ছফার অন্যতম সৃষ্টি ওঙ্কার, বাংলা সাহিত্যে বিরল। স্বদেশের প্রতি লেখকের দায় ষোলো আনাই পূরণ হয়েছে। শুধু ওঙ্কার নয়; গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতাসহ সাহিত্যের প্রতিটি ধারায়ই তাঁর কাজ ছিল বাস্তবধর্মী ও সমসাময়িক। এ কারণে তিনি সব সময় সাহিত্যপাড়ার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেন। প্রতিটি সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে একটি সচেতনতামূলক বার্তা তিনি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য রেখে গেছেন।
জাগ্রত বাংলাদেশ প্রবন্ধে আহমদ ছফা দেখিয়েছেন, জিন্নাহ ও কতিপয় সমষ্টি যে ভিত্তিতে বিভাজন ঘটাতে চেয়েছিলেন, তা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে ভাঙনের শুরু। এরপরও ঔপনিবেশিক বা আধা–ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন ও শোষণ চালাতে থাকে পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর। এই ঔপনিবেশিকের মূল চাবিকাঠি ছিল ধর্ম। কেননা আজও বাঙালি ধর্মভীরু।
পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ উপন্যাসে আহমদ ছফা প্রকৃতির গাছপালা এবং পক্ষিকুলের কাছে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করেছেন। তাদের মধ্যেও যে মানবজীবনের মতো কলহ–বিবাদ, দ্বন্দ্ব, হানাহানি হয়, তা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
শোনা যায়, মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে লেখক হুমায়ূন আহমেদের পরিবারকে সরকার কর্তৃক একটা বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি এক চাকরিজীবী কৌশলে বাড়িটি দখলের চেষ্টা করলে হুমায়ূন আহমেদের বাড়িছাড়া হওয়ার অবস্থা হয়। তখন ঢাকা শহরে গায়ে আগুন দিয়ে প্রতিবাদের চেষ্টা করেন আহমদ ছফা। তৎকালীন সরকারপ্রধান এ বিষয়টি জানার পর তা সমাধান করে দেন। তবে অনেকের মতে, ছফার প্রতিবাদী মনোভাবের একটি রূপক গল্প হিসেবে এটি প্রচলিত।
আজ ৩০ জুন লেখক আহমদ ছফার ৮২তম জন্মদিন। জন্মদিনে লেখকের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
সভাপতি, ড্যাফোডিল বন্ধুসভা