এই দেখা না হলেই ভালো ছিল

কিছু সাক্ষাতে মনে হয় দেখা না হলেই ভালো ছিল! মডেল: সায়রা ও তুর্য,ছবি: অধুনা

অঙ্কিতার সঙ্গে দেখা নেই পুরো এক বছর। শেষ যখন কথা হয়েছিল, তার বলা একটি কথাই কানে বাজে বারবার, ‘তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে সব সময় যত দূর চোখ যায়, তাকিয়ে কখনোই দেখি না তোমায়।’ এটাই ছিল শেষ কথা। হুট করেই অফলাইন হলো যে তিন শ পয়ষট্টি দিন শেষ হলো গতকাল।

আমাদের বাড়ির যে পাশ দিয়ে অঙ্কিতা যাতায়াত করত, সেখানকার বটগাছটির বয়স এক বছর বাড়ল। মায়াতলীর চা–দোকানটা আমার এখন চিরচেনা। বাকির খাতায় হাজারখানেক টাকা জমা হয়েছে। অথচ কেউ জানে না কেন নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা চার কাপ চায়ের সঙ্গে দুই ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা এখানে বসে কাটাই। সেবারের বর্ষায় তো কদিন জ্বরের তোপে আসতেই পারিনি বৃষ্টিতে জবুথবু হয়ে।

দূর থেকে খেয়াল করলাম, দোকানের সামনে আজ লোকারণ্য। কিন্তু দোকানটির নিয়মিত চা ক্রেতা কেবল আমিই। এত মানুষ দেখে সংশয় জাগল। আবার মনে হলো, ক্রেতা বেশি হতেই পারে। আমিও লোকজনের ভিড়ে ঢোকার চেষ্টা করলাম। ততক্ষণে কানে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি—‘আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান’, ‘আমার বাচ্চার বয়স পাঁচ দিন’, ‘বাঁচান প্লিজ’।

মনে হচ্ছে খুব কাছের গলা। ১০ মিটার দূরে সিএনজিচলিত অটোরিকশার ভাঙা কঙ্কাল পড়ে আছে। লোকজন ঠেলে ভিড়ের মধ্যে এগিয়ে গিয়ে দেখি, রক্তে থ্রিপিসের উপরিভাগ ভেজা, মাথা খুব বাজেভাবে থেঁতলে আছে। পেছন থেকে চিনতে পারছি না, মেয়েটির সামনেই তাঁর পাঁচ দিন বয়সী নবজাতকের মরদেহ। নবজাতকের পাশে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসতেই মেয়েটির চোখে চোখ। চেহারা স্পষ্ট দেখছি না, রক্তের দাগে লাল হয়ে আছে, নাকি আমার চোখের জলে ঝাপসা হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। হাঁটু গেড়ে বসে গিয়ে আর ওঠার চেষ্টা করিনি। অঙ্কিতা হয়তো আমাকে চিনেছে, না হয় চেনেনি সেদিন...।

খিলক্ষেত, ঢাকা