গ্রাম হোক শহর, মানুষ থাকুক গ্রামীণ
আমাদের দেশের গ্রামীণ অঞ্চলগুলো এখন আর পিছিয়ে নেই। থাকবার কথাও নয়। যুগের হালে পাল্টেছে সব। এক সময়কার কুঁড়েঘর এখন আর চোখে পড়ে না। গ্রাম্য সেই পরিবেশও নেই। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তবে এখনো স্নিগ্ধতা উঁকি মারে। শীতল হাওয়া, নয়নজুড়ানো সবুজের মাঠ, কৃষাণীর গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু। এই দৃশ্যগুলোও এখন অনেকটাই কমে এসেছে।
বর্তমানে খুব কম বাড়িতেই গৃহস্থালির কর্ম হয়। ফসলের মাঠ যেন সোনার হরিণ। একসময় যেখানে প্রতিটি বাড়িতেই মানুষের অন্তত পক্ষে ফসল ফলানোর দু-একজন ছিল, এখন সেটা দুঃস্বপ্ন। শহরের বাতাস গাঁয়ে মাখাতে গিয়ে শহুরে হয়ে উঠেছি। স্রষ্টার আশীর্বাদকে ভুলতে বসেছি। ঠিক যেন পালের হাওয়া গায়ে লাগাতে গিয়ে গ্রামকে ধ্বংস করার মহাপ্রচেষ্টা আমাদের। বন উজাড় করে তৈরি করছি বড় বড় প্রাসাদ-অট্টালিকা। ফসলি জমি নষ্ট করে সেখানে গড়ে তুলছি বসতি। একান্নবর্তী পরিবার ছেড়ে যে যার আখের গোছানোর ধান্দায় ব্যস্ত। মুখে বুলি ছাড়ছি, গ্রাম হচ্ছে শহর! হোক না শহর কিন্তু মানুষগুলো যেন শহুরে না হয়। ইট-পাথরের দেয়ালে ঘেরা আমাদের জনজীবনের ব্যস্ততাকে পুঁজি করে প্রতিনিয়ত আমরা কত রকমের অজুহাত খুঁজছি। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে সম্পর্কে ফাটল ধরাচ্ছি। নিজের গাম্ভীর্যকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে হিংসুটে হয়ে উঠছি। একের বিপদে অন্যে এগিয়ে না এসে বরং তামাশা করছি।
ছোটবেলায় শুনেছি এখনকার অনেক বড় বড় মানুষেরা নাকি অন্যের বাড়িতে লজিং থেকে, গায়ে খেটে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজেছে। অথচ সেই মানুষগুলোই বর্তমানে শিল্পপতি, সমাজসেবক হয়ে নিজের বাড়িতে বাউন্ডারি টানছে। সন্তানদের শেখাচ্ছে ‘অমুকের সঙ্গে মেশা যাবে না!’ বন্দী জীবনে আটকে দিচ্ছে।
শহরে এসব আগে থেকেই চলত। এখন গ্রামেও চর্চা হচ্ছে। মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। অবকাঠামো, রাস্তাঘাট সবই উন্নত হচ্ছে, কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন ঘটছে না। সবই যেন পাল্টে যাচ্ছে। এদিকে আবার শুনছি খাদ্যসংকটও দেখা দিচ্ছে। দিবেই বা না কেন। অধিকাংশ মানুষই কৃষির প্রতি উদাসীন। গ্রামের লোকেরাও ভাবতে শুরু করেছে সরকার খাবারের ব্যবস্থা করবেই।
ফসল ফলানোর চেয়ে যদি কিনে খাওয়া যায়, সেটা মন্দ কি। তা ছাড়া আমাদের সন্তানেরা কেন কৃষির প্রতি ঝুঁকবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে কি আর গ্রামীণ-খেতের মতো জীবন যাপন করা যায়! আধুনিক তো হতে হবে। আর তাতেই যেন সংকটের বীজ বপণ করছি প্রতিনিয়ত। কৃষক কমে যাচ্ছে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোও এখন চালাক হওয়ার দৌড়ে অংশ নিচ্ছে। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছে না এটি বিপ্লব নয়! অশনি সংকেত। পেটে খাবার থাকলেই তো স্বপ্ন দেখতে পারব। আর তাই গ্রামকে টিকিয়ে রাখতে হলে ‘গ্রাম হোক শহর’ তাতে আপত্তি নেই, মানুষগুলো যেন শহুরে না হয়।
সভাপতি, চাঁদপুর বন্ধুসভা