আমার আব্বু একজন জীবনযোদ্ধা

আমার আব্বু একজন জীবনযোদ্ধাছবি: সংগৃহীত

আমার আব্বু একজন জীবনযোদ্ধা। তাঁর জীবনের সব কাজের একমাত্র লক্ষ্য সন্তান ও পরিবারের সমৃদ্ধি। নিজের ওপর যত সংকটই আসুক না কেন, আমাদের বুঝতেও দেন না। দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি ঢাকায় কাটিয়েছেন; সময়টা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়।

দাদা-দাদি আমাকে আর আম্মুকে ঢাকায় নিয়ে যেতে নিষেধ করে দেন। এ কারণে আমার জন্মের দুই বছর পর চাকরি ছেড়ে আব্বু গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকার জন্য।

আব্বুর একটা ডায়েরি পড়েছি। উনি যখন প্রথমবার ঢাকায় গিয়েছিলেন, তখনকার। ডায়েরিটা পড়লে এখনো কান্না পায়। উনি সম্পূর্ণ খালি হাতে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। এমনও দিন গেছে, বালিশের বদলে মাথায় ইট দিয়ে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে।

যখন বুঝতে শুরু করেছি, সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত দুই-তিনবারের বেশি কখনো নতুন শার্ট-প্যান্ট কিনতে দেখিনি। প্রয়োজন হলে ফুটপাত থেকে পুরোনো পোশাক কিনে এনে পরেন। অথচ জন্মের পর থেকে প্রতিটি ঈদে আমাকে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছেন। যখন যা আবদার করি, তা-ই সামনে এনে হাজির করেন। কখনো কোনো অভাব বুঝতে দেন না। এমনকি আব্বুর জন্য রাতে যে তরকারি রাখা হয়, সেখান থেকেও অর্ধেকটা তিনি রেখে দেন সকালে আমি খাব বলে!

২০২১ সালে আমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি। সে সময় বুঝতে পেরেছি, আব্বুর ভালোবাসা কতটা গভীর। জীবনে প্রথমবার ওনাকে কান্না করতে দেখেছি। আমার হাত ধরে আব্বু কান্না করে বলেছিলেন, ‘মা, আমার কলিজাটা কোথায় মা?’
রংপুরে ক্লিনিকে ১৭টি রাত তিনি নিশাচরের মতো কাটিয়েছেন; কখনো আমার বিছানার সামনে পায়চারি করে, কখনো বসে। ক্ষণে ক্ষণে আমার শরীরে লাগানো স্যালাইনের নলটা পরীক্ষা করতেন। মধ্যরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কান্না করতেন। আমাকে সুস্থ করার জন্য তিলে তিলে জমানো সব টাকা খরচ করে ফেলেন। নিজের কষ্টের টাকায় কেনা বাসটাও বিক্রি করতে দ্বিধা করেননি।

আব্বুর অবদানের সমতুল্য কোনো প্রতিদান হয় না। আমার কাছে আব্বু মানে তলোয়ারের সামনে ঢাল, ধু ধু মরুভূমির বুকে একফোঁটা জল, জীবন নামক সমুদ্রে বেঁচে থাকার লাইফ জ্যাকেট।

বন্ধু, পঞ্চগড় বন্ধুসভা