‘লাজে রাঙা হলো কনেবউ গো’—কনেবউয়ের মতো বানর কি কখনো লজ্জা পেতে পারে? এ–ও কি সম্ভব! বানরের বাঁদরামির সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। মুখ ভেংচি দেওয়া, এক গাছের মগডাল থেকে অন্য গাছের মগডালে লাফিয়ে বেড়ানো থেকে বাজিকরের আসরে খেলা দেখানোতেও বেশ পটু এই বানর। কিন্তু আজ এমন এক প্রজাতির বানরের কথা বলব, যাদের মধ্যে এসব বাঁদরামির লেশমাত্র নেই। মানুষ দেখলে এরা সত্যিকারের লজ্জা পেয়ে নববধূর মতো দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলে। এ জন্যই এদের বলা হয় লজ্জাবতী বানর বা লাজুক বানর বা মুখচোরা বানর। এদের ইংরেজি নাম স্লো লরিস এবং বৈজ্ঞানিক নাম Nzcticebus bengalensis। এরা লরিমিডি পরিবারের অতিবিপন্ন বানর প্রজাতি।
লজ্জাবতী বানর দেখতে অনেকটা ছোট পান্ডার মতো। মাথা গোলাকার, মুখ চ্যাপটা, মায়াবী চোখ। এদের শরীরে সাদা লোমের আধিক্য নজরে পড়ে। পিঠে রয়েছে খয়েরি বর্ণের লম্বা ডোরাকাটা দাগ। পায়ের আঙুল পাঁচটি। কান ছোট, লেজ খাটো। ওজন ১-২ কেজি। অনুকূল পরিবেশ পেলে মাত্র ১০ থেকে ১২ বছর বেঁচে থাকে। স্ত্রী বানরটি বছরে মাত্র একটি বাচ্চা প্রসব করে। গাছের কচি পাতা, গাছের আঠা, কষ, ছোট ছোট পোকামাকড়, ছোট পাখি এবং বিভিন্ন প্রাণীর ডিম এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে। অন্য বানরের মতো এরা হাত দিয়ে খাবার খায় না, পাখির মতো মুখ লাগিয়ে খায়। এরা খুব শান্ত প্রাণী। অন্যান্য বন্য প্রাণীর চেয়ে বেশ ধীরে চলে। এরা নিশাচর। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া দিনে চলাচল করে না। লজ্জাবতী বানর সাধারণত একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। সপরিবার কদাচিৎ দেখা মেলে।
লজ্জাবতী বানর গাছের উঁচু শাখায় থাকতে পছন্দ করে। উঁচু গাছের মগডালে বেশির ভাগ সময় উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে কিংবা দিনের বেলায় গহিন জঙ্গলের ভেতর এক জায়গায় শামুকের আকার ধারণ করে বসে থাকে। এ জন্য এদের শামুক বানরও বলা হয়। এরা বেশ শৌখিন প্রকৃতির প্রাণী। ঝোপজঙ্গলে প্রবেশ করে না। একা থাকতে ভালোবাসে। বাংলাদেশের পাহাড়ি চিরসবুজ বনে এদের দেখা যায়। বাংলাদেশের মানুষ আদর করে ওদের বাংলা লজ্জাবতী বানর বলে থাকে। বৃষ্টিপাত হয় না এবং জনমানবের যাতায়াত নেই, এমন জায়গা এই বানরের পছন্দ। কিন্তু লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রেখেই কি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে মিষ্টি চেহারার লজ্জাবতী বানরগুলো, এটাই এখন প্রশ্ন। কারণ, বনভূমি বিপন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লজ্জাবতী বানরও এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। লজ্জাবতী বানর আইইউসিএনের লাল তালিকায় সংকটাপন্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে।
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়