ডাক্তার সমাচার

ডাক্তারপ্রতীকী ছবি

আমাদের কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সৈয়দ সানোয়ার স্যার একজন হাঁপানির রোগী। অ্যাজমা সমস্যা। রোগ বেড়ে গেলে তিনি হাসপাতালে যান ঠিকই, তবে ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকেন না। চেম্বারের সামনে বসে থাকা রোগীদের সঙ্গে আলাপ করে দেখেন কার সঙ্গে তাঁর সমস্যা হুবহু মিলে যাচ্ছে। তারপর সেই রোগী ডাক্তার দেখিয়ে এলে প্রেসক্রিপশন থেকে ওষুধের নামগুলো টুকে নিয়ে ফার্মেসি ঘুরে ওষুধ কিনে বাড়ি চলে যান। ওষুধও যথার্থ পাওয়া গেল, ডাক্তারের ভিজিটও দেওয়া লাগল না।

জীবনে চলার পথে একটু চালাক না হলে কি চলে! ডাক্তারদের যা মোটা অংকের ভিজিট, আর যত টেস্ট! আঙুল কাটা নিয়ে হাসপাতালে যাবেন, হয়তো পাঁচটি টেস্ট দিয়ে দেবে, যার মধ্যে তিনটিই অপ্রাসঙ্গিক। টাকা কামানোর ধান্দা।
পাশের ফ্লাটের মুহিবুর ভাই। যিনি কোট-টাই না পরে অফিসে যান না; তাঁকে একদিন দেখি লুঙ্গি পরে হাসপাতাল থেকে ফিরছেন। হাতে এক্স-রে প্লেট, প্রেসক্রিপশন ও ওষুধপত্র।
জানতে চাইলাম, ‘লুঙ্গি পরে কেন?’
বললেন, ‘আর বলবেন না। গরিব মানুষ দেখলে ডাক্তারদের মায়া হয়। ভিজিট কম নেন। প্রেসক্রিপশনে ছয়টি ওষুধের নাম লিখে জিজ্ঞেস করলেন আমি কী করি। জানালাম একটা গার্মেন্টসে কাজ করি। সঙ্গে সঙ্গে দুটি ওষুধের নাম কেটে দিলেন।’

একদিকে বাঙালি হলো অতি মেধাবী জাতি। সিনড্রম দেখে ডাক্তার যে ওষুধ দেন, তারা তা মনে রেখে অন্যের অসুখে নিজেই ডাক্তার সেজে পরামর্শ দেওয়া শুরু করেন। যেমন, বুক ব্যথা? মনে হয় গ্যাসট্রিক, অ্যান্টাসিড খান। চোখে-চামড়ায় এলার্জি? এলাট্রল দুই বেলা। পায়ুপথে রক্ত ঝরে? পাইলস, ডিমোরাইড খেলে ১৫ দিনে সমাধান। মাঝেমধ্যে ভাবি, ওপেন হার্ট সার্জারিতে ডাক্তার রোগীকে পরিপূর্ণ অজ্ঞান না করলে হয়তো রোগীরা বুক কাটা শিখে এসে আত্মীয়–স্বজনদের সার্জারি করতে ডিসপেনসারি খুলে বসত!

আমার বন্ধু আরিফের বাবা একজন দাতব্য চিকিৎসক। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ রোগাক্রান্ত হলে তাঁর সেবা-চিকিৎসায় সুস্থ জীবন পান। হাজিপুর বাজারে তাঁর ফার্মেসি। ফার্মেসির নাম নিরাময় কেন্দ্র, যার সাইনবোর্ডে লেখা- ‘আমি কোনো ডাক্তার নই; আমি একজন অভিজ্ঞ রোগী। জীবনে নানান পীড়ায় ভুগিতে ভুগিতে নিজেই এখন ডাক্তার হইয়া গিয়াছি।’

হারুয়া, কিশোরগঞ্জ