আমার মা

অলংকরণ: আরাফাত করিম

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ পাশের রুমে চোখ আটকে যায়। দেখতে পাই, আম্মু আমার ছোট বোনের লাল জামাটি মুখের ওপর ছড়িয়ে গন্ধ শুঁকছে আর চোখ দিয়ে জল অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে। লাল জামাটি আমার ৯ মাস বয়সী বোনটার, যে আজ থেকে ২২ বছর আগে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে। বোনের জামাগুলো আম্মু খুব যত্ন করে লুকিয়ে গুছিয়ে রাখত, যেন হারিয়ে না যায়। এত দিন বুঝিনি এগুলো এত গুছিয়ে রাখার কারণ। সেই দিন বুঝতে পারি কেন তিনি সন্তানের শেষ স্মৃতিটুকু এতটা আগলে রাখেন।

মানুষ মরে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সবাই তাকে ভুলে যায়, স্মৃতিগুলো ঝাপসা হতে থাকে। একটা সময় পর সেই মানুষটার স্মৃতি আর কাউকে নাড়া দেয় না। তবে এই পৃথিবীতে মা হচ্ছে এমন এক মানুষের নাম, যে আপনি মারা যাওয়ার ২২ বছর পরও সবার আড়ালে, অগোচরে এভাবে আপনার জন্য চোখ ভেজাবে। আপনার স্মৃতিগুলো গভীর মমতায় আগলে রাখবে সারা জীবন। কী অদ্ভুত মায়েরা! সময়, স্থান, কাল, যুগ, শতাব্দী—সব যেন হার মানে মায়ের এই ভালোবাসার কাছে।

জীবনে এমন কিছু সময় এসেছে, যখন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু তখনই চোখের সামনে আম্মুর মুখটা ভাসত। ভাবতাম, আমি মরে গেলে আম্মু খুব কষ্ট পাবে। যাদের দেওয়া কষ্টে আজকে মরে যেতে যাচ্ছি, তারা মরার দুই দিন পরই ভুলে যাবে। আর আমার মা, যিনি আমাকে এতটা ভালোবাসেন, সারা জীবন আমাকে হারিয়ে বিনা অপরাধে শাস্তি পেয়ে যাবেন, ধুঁকে ধুঁকে শেষ হবেন। এতটা স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ আমি নই। সিদ্ধান্ত নিই আমি বাঁচব। সব দুর্ভোগ, যন্ত্রণার সঙ্গে সংগ্রাম করে হলেও আমাকে বাঁচতে হবে। আম্মুর জন্য বাঁচতে হবে।

আমার আম্মু ভাবেন, আমি ওনাকে বুঝি না, ওনার কথার পাত্তা দিই না। কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ তিনি।