মেছতা থেকে বাঁচতে চাইলে

মেলাজমা বা মেছতাছবি: সংগৃহীত

মেলাজমা বা মেছতা, ত্বকের এমন একটি সমস্যা যেটি তেমন ক্ষতিকর নয়; কিন্তু তা আমাদের সৌন্দর্যের ওপর প্রভাব ফেলে।

যেসব কারণে মেছতা হয়
খুবই সাধারণ একটি কারণ হচ্ছে, দীর্ঘক্ষণ সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে থাকা। অনেকটা সময় সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে থাকলে ত্বকের মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যায়। মেয়েদের যে কারণে মেছতা বেশি হয়, সেটি হলো হরমোনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা হ্রাস, গর্ভকালীন ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরনের বৃদ্ধি। এর ফলে ত্বকের মেলানিন উৎপাদনও বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেখা দেয় মেছতা বা মেলাজমা। আরও যেসব কারণ রয়েছে, তার মধ্যে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল। এ ছাড়া নারীরা না বুঝে ত্বকের যত্ন করছেন ভেবে এমন কিছু উপাদানযুক্ত পণ্য ব্যবহার করেন, যেগুলো ত্বকের ক্ষতি করে, ত্বকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে আনে এবং মেছতা বাড়িয়ে দেয় বা মেছতা সৃষ্টি করে।

অনেক সময় ত্বকে যদি কোনো হালকা দাগ থাকে, সেটিকে কমানোর জন্য তাঁরা ভুল করে ওভার দ্য কাউন্টারের কিছু রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করেন; যার ফলে মেছতা দেখা দেয়। আবার হালকা মেছতা থাকলে সেটিকে ঠিক করতে গিয়ে এমন কিছু ব্যবহার করেন, তাতে মেছতা তো যায়ই না বরং সেটি আরও স্থায়ীভাবে ত্বকে বসে যায়। কিছু প্রসাধনী আছে যার ডাই, ফ্রেগরেন্স ও পিগমেন্টের কারণেও মেছতার উদ্রেক হয়ে থাকে। থাইরয়েডের সমস্যা, লিভারের সমস্যা—এগুলোর কারণে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই মেছতা হয়ে থাকে। কিছু রোগ ও ওষুধ মেছতার দাগ এবং স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়।

মেছতার চিকিৎসা
আজ মেছতার চিকিৎসায় এমন একটি প্রটোকলের কথা বলব, যেটি ভীষণ জনপ্রিয় ও ফলাফলভিত্তিক। সেটি হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থেরাপি। ট্রিটমেন্ট প্রটোকলে খাবার, সাপ্লিমেন্ট, প্রোডাক্ট ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রসিডিউরের মাধ্যমে একটি কম্প্রিহেনসিভ ট্রিটমেন্ট প্রটোকল দিয়ে থাকি।

প্রথমত, খাবারের যে পরিকল্পনাটি দিয়ে থাকি, সেখানে থাকতে হবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রিচ ডায়েট; যেমন লাইকোপেন, লুটেইন, ট্যানিন, অ্যাস্টাজেনথিন, বিটা ক্যারোটিন; যেগুলো গাজর, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, আম, দেশি সবজি ও মৌসুমি ফলে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। অনেক সময় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্টও দিয়ে থাকি; যেটি অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে ত্বকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে ত্বকের প্রদাহও কমিয়ে দেয়। এই সাপ্লিমেন্টগুলোতে সাধারণত কোলাজেনের সঙ্গে ভিটামিন সি, পাইন এক্সট্র্যাক্ট—এগুলোকে ইনকরপোরেট করে থাকি। অনেক সময় কারকিউমিন সাপ্লিমেন্টও দিয়ে থাকি।

মেছতা
ছবি: সংগৃহীত

এরপর আসছি পণ্যের ব্যাপারে। ত্বকের যত্নে যে রুটিনটি তৈরি করে থাকি, সেটি হতে হবে ত্বকবান্ধব। একাধারে এটি ত্বককে যেন পরিপুষ্ট, শুষ্ক ও সুরক্ষিত রাখে। সাধারণত আলট্রাভায়োলেট এ, আলট্রাভায়োলেট বি এবং ইনফ্রারেড রে থেকে ত্বককে রক্ষার জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। ফার্মেন্টেড রাইস এক্সট্র্যাক্ট, জোজো ব্লোসম ফ্লাওয়ার এক্সট্র্যাক্ট এবং বিভিন্ন প্ল্যান্ট বেজড পেপটাইডে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে; যেটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে কমিয়ে দেয় ও ফ্রি র‍্যাডিক্যালকে নিউট্রালাইজ করে মেলানিন তৈরি কমিয়ে দেয় এবং স্কিন লাইটেনিং ইফেক্ট দেয়।

এবার আসছি আমার পছন্দের ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থেরাপি। এগুলো সাধারণত কাস্টমাইজ করে থাকি রোগীদের অন্তর্নিহিত রোগ, স্কিন কনসার্ন ও মেলাজমার তীব্রতা অনুযায়ী। সাধারণত ভিটামিন সি, গ্লুটাথায়ন, আলফা লিপোয়িক অ্যাসিড, পেপটাইড—এগুলো মিশ্রিত থাকে এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ককটেলগুলোতে। যেগুলো একাধারে আমাদের হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে, স্লিপ হরমোন মেলাটোনিনকে বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে বিউটি ফ্যাক্টর কোলাজেন, ইলাস্টিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় ও মেলানিন তৈরি কমিয়ে দেয়। পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমেও কিন্তু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি হয় শরীরে। এর মাধ্যমে আমরা মেলানিনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। এভাবেই মেছতার চিকিৎসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। মেছতার চিকিৎসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ব্যবহারকে ভার্সেটাইল চিকিৎসা বলা হয়।

যদি নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে ত্বকের যত্নে এই পদ্ধতিগুলো মেনে চলি, তাহলে এগুলোর স্থায়িত্ব বাড়বে এবং তা মেছতাকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

ওয়েলনেস অ্যান্ড বিউটি কনসালট্যান্ট এবং স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ