সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং

সোনাদিয়া দ্বীপে লেখকছবি: লেখকের সৌজন্যে

সমুদ্রের কোল ঘেঁষে অবস্থিত কক্সবাজার শহর। এই শহরে পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের স্থান ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। আরও আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপ অন্যতম, যা ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় বনের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বীপ।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ও মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত সোনাদিয়া দ্বীপ। লোকমুখে প্রচলিত আছে, কয়েক শ বছর আগে পর্তুগিজ জলদস্যুদের হামলায় একটি স্বর্ণবোঝাই জাহাজ ডুবে যায় এ দ্বীপে। পরবর্তী সময়ে জাহাজের ধ্বংসস্তূপ ঘিরে জেগে ওঠে এই অপরূপ এলাকাটি।

সোনাদিয়া দ্বীপের ক্যাম্পিং পয়েন্ট

যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু মুক্তি পেতে ছুটে গিয়েছিলাম প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সোনাদিয়া দ্বীপে। দুপুর ১২টায় কক্সবাজার সদরের নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লি এলাকায় পৌঁছায়। উত্তপ্ত রোদে নারী, পুরুষ ও শিশুরা শুঁটকি বানানোর কাজে ব্যস্ত। আমাদের গন্তব্য নাজিরারটেক চর। চরে জেলেরা সাগরের মধ্যে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য ট্রলার প্রস্তুত করছিলেন। আবার কেউ কেউ জাল বুনছেন, কেউ আবার ট্রলার থেকে মাছ নামিয়ে ঠেলা করে শুঁটকি বানানোর জন্য কাঁচা মাছ নিয়ে যাচ্ছেন।

সোনাদিয়া দ্বীপে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম নৌপথ। আমরা নৌকা দিয়ে দ্বীপে যাই। স্থানীয় ভাষায় এই নৌকার নাম ‘গাম বোট’। বাঁকখালী নদীর বঙ্গোপসাগরে মিলিত হওয়ার অংশ দিয়ে ৩০ মিনিট সময় লাগে দ্বীপে পৌঁছাতে।

তখন বেলা একটা, আমাদের মাথার ওপর টগবগে উত্তপ্ত সূর্য। সোনাদিয়ার চরের বালু মরুভূমির মতো গরম। সবাই উত্তপ্ত বালু পাড়ি দিয়ে পূর্বপাড়ার ক্যাম্পিং পয়েন্টে চলে গেলাম। রাতে ক্যাম্পিংয়ের জন্য যাই লাল কাঁকড়া ক্যাম্পিং ইকো রিসোর্টে।

সোনাদিয়া দ্বীপ

দুপুরের খাবারের পর ঝাউবাগানে মাদুর বিছিয়ে বিশ্রাম করেছি। সূর্যের তাপ কমলে সোনাদিয়ার সমুদ্রসৈকতে গা ভেজাতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সমুদ্রের পাড়ে সারি সারি লাল কাঁকড়ার দল খেলা করছে। একটু এগোতেই দ্রুত গর্তে ডুকে পড়ল কাঁকড়ার দল। সমুদ্রের পাড়ে ভেসে আসছিল মৃত জেলিফিশ। আশপাশে কোথাও কেউ নেই, শোঁ শোঁ বাতাসের শব্দ।

তিন দিকে নীল সাগর, লাল কাঁকড়া, কেয়া বন—সব মিলিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে, যা দেখতে পর্যটকেরা ভিড় জমান এ দ্বীপে। বিভিন্ন অতিথি পাখি ও জলচর পাখিরও দেখা মিলবে। এখানকার সূর্যাস্ত আরও মনোমুগ্ধকর।

এই দ্বীপ ক্যাম্পিংয়ের জন্য সেরা, বিশেষ করে চাঁদনি রাতে সোনাদিয়ার সৈকতে ক্যাম্পিং আর বারবিকিউ পার্টির মজাই অন্য রকম। আমরা রাতে বারবিকিউ পার্টি করি। গভীর রাত পর্যন্ত উৎসব চলে। খোলা আকাশের নিচে তাঁবুতে সুন্দর একটি রাত কেটে যায়।

সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভা