কোরিয়ায় বাঙালির মিলনমেলা

বাংলাদেশ দূতাবাস কোরিয়ায় বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদ্‌যাপনে কোরিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা
ছবি: সংগৃহীত

বসন্তে কোরিয়ার সৌন্দর্য দেখা হবে, এটা কল্পনায়ও ছিল না। গতবার যখন এশিয়া সলো পারফরম্যান্স ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে আমি আর মীর লোকমান কোরিয়ায় গিয়েছিলাম, তখন থেকেই আক্ষেপ ছিল বসন্তে কোরিয়ার রূপবৈচিত্র্য দেখার। বিশেষ করে চেরি ফুল দেখার। কোরিয়ায় বসন্তের মূল আকর্ষণ ‘চেরি ব্লজম’। তাই এবার বসন্তে কোরিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেয়ে তা আর হাতছাড়া করতে চাইনি।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেশটির সব অঞ্চলে চেরি একসঙ্গে ফোটে না, ৫-৬ দিন আগে–পরে ফোটে।

যাহোক, আসল গল্প বলি। গত ২৬ এপ্রিল মীর লোকমানের ফোন এল। বললেন, মিসপি ম্যাম আমাকে খুঁজছেন। মিসপি সোরেন কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব। ফোন করলাম ম্যামকে। তিনি বললেন, ‘৭ মে আমরা বাংলাদেশ দূতাবাস কোরিয়ায় বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদ্‌যাপন করতে চাই। আপনাকে আসতে হবে।’ কিন্তু এত অল্প সময়ে কীভাবে সম্ভব। ম্যাম ২৮ তারিখেই আমাদের ইনভাইটেশন লেটার পাঠিয়ে দিলেন। ৩০ এপ্রিল ভিসার জন্য দাঁড়ালাম। ২ মে সকালে ভিসা হাতে পেলাম এবং সেদিনই বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় যাত্রা শুরু, উদ্দেশ্য কোরিয়ায় ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০’ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে মূকাভিনয় ও নাচ করা। কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য অবস্থান করছেন মীর লোকমান। দুজনই মূকাভিনয় করব। দেশ থেকে আমার ভ্রমণসঙ্গী হলেন নৃত্য পরিচালক ও নৃত্যশিল্পী জহুরুল হক সৃজন এবং সাউন্ডের জন্য আবু বকর ভাইয়া। সৃজন ভাইয়ের জোরাজুরিতে দীর্ঘদিন পর নাচ করতে রাজি হলাম। যাওয়ার আগের দিন আমার আইকন সাদিয়া ইসলাম মৌ আপুর কাছ থেকে নাচের কস্টিউমস নিয়ে এসেছিলাম। আপুর কস্টিউমস পরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারফর্ম করা অনেক বড় পাওয়া।

বাংলাদেশ থেকে এম্বাসির মারফতে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য মুখোশ ও অন্যান্য জিনিসে ভরা এক বিশাল কার্টন আমাদের নিয়ে যেতে হয়েছে। ৩ মে কোরিয়ার সময় সকাল ৯টায় পৌঁছালাম ইনচন এয়ারপোর্টে। এম্বাসির ড্রাইভার আমাদের রিসিভ করলেন। থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল প্রথম সচিব সামুয়েল মুর্মু ও দ্বিতীয় সচিব মিসপি সোরেন ম্যামের বাসায়। নিজের পরিবারের মতো সেখানে থেকেছি। মিসপি ম্যামের মা আর কাকির সঙ্গে প্রতিদিনের গল্প করা ছিল উপভোগ্য। অনেক আন্তরিক তাঁরা।

মূকাভিনয় প্রদর্শনী
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিদিন এম্বাসিতে রিহার্সাল থাকত। মাঝে এক দিন সবাই মিলে ‘স্টারফিল্ড লাইব্রেরি’ দেখতে গিয়েছিলাম। তবে ৭ তারিখটা ছিল স্মরণীয়। সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় কোরিয়ায় অবস্থিত বাঙালিরা অংশ নিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল, কোরিয়ায় একখণ্ড বাংলাদেশ। আমাদের সবার পারফরম্যান্সও হয়েছে দুর্দান্ত। দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রদূত দেলওয়ার হোসেনের বাসভবনে ছিল সান্ধ্য ও নৈশভোজের নিমন্ত্রণ।

প্রথম দিন মীর লোকমান বুসান থেকে সিউলে চলে এসেছিলেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। বিকেলে ডকসেওডং থেকে ডংডায়ামনে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়ে চেরি ব্লজমের দর্শন পেলাম।

খুব বেশি ঘোরাঘুরির সুযোগ হয়নি। কারণ, প্রতিদিন এম্বাসিতে রিহার্সাল থাকত। মাঝে এক দিন সবাই মিলে ‘স্টারফিল্ড লাইব্রেরি’ দেখতে গিয়েছিলাম। তবে ৭ তারিখটা ছিল স্মরণীয়। সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় কোরিয়ায় অবস্থিত বাঙালিরা অংশ নিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল, কোরিয়ায় একখণ্ড বাংলাদেশ। আমাদের সবার পারফরম্যান্সও হয়েছে দুর্দান্ত। দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রদূত দেলওয়ার হোসেনের বাসভবনে ছিল সান্ধ্য ও নৈশভোজের নিমন্ত্রণ। হরেক রকমের খাবার শেষে যখন আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি ফেরার, তখন রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী সেলিনা খন্দকার বললেন, ‘এবার দোতলায় চলুন, রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।’ তাঁর হাতের খিচুড়ি আর দুধসেমাইয়ের স্বাদ সারা জীবন মনে থাকবে। খাবারের পর রাষ্ট্রদূত ও ম্যামের কাছ থেকে আলাদা আলাদা উপহার পেয়েছি।

পরদিন ফ্লাইট, বরাবরের মতো লেট করলাম। আমার দুই ভ্রমণসঙ্গী আমাকে রেখেই এয়ারপোর্টে চলে গিয়েছিল। তবে এবারও সমুদ্র না দেখার অতৃপ্তি নিয়ে কোরিয়া থেকে ফিরেছি।