প্রিয় অন্তু,
উত্তপ্ত দুপুরের মিষ্টি রোদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করিবে। অব্যক্ত বন্ধুত্ব নামক ভালোবাসার কিছু অতৃপ্ত অনুভূতির আবছা বিচ্ছুরণ আজ তোমায় লিখব। ঝিরঝির বৃষ্টির স্নানরত দূর্বাঘাস, তোমার প্রথম দর্শনে কি জাদু ছিল? এই ধরণিতে তোমার চোখের ভাষার চেয়ে দামি আর কোনো ভাষা আছে কি না, জানা নেই।
এটা আমাকে অনেক আনন্দিত করে। তোমার–আমার পরিচয় চলমান ঋতুর শুরুতে, সম্পর্কের নতুন জানাশোনা। খুব ভালো সময়ে তোমার–আমার পরিচয়। এখন প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। ছয় ঋতুর এই বাংলাদেশে এখন তৃতীয় ঋতু চলছে। ঋতুর রাজকুমারী হলো শরৎকাল। নববধূর মতো নজরকাড়া তার রূপ। কোমল, স্নিগ্ধ উদারতায় ঘেরা এই ঋতু। ভাদ্র, আশ্বিন—এই দুই মাসকে বলা হয় শরতের যৌবনকাল।
তোমার গোলাপের মতো পাপড়িময় ঠোঁটের হাসি আমায় শরৎকালে যৌবনের মতো বিমোহিত করে তোলে। তোমার হেঁটে যাওয়ার সময় নূপুরের শব্দ শুনে আমার এই পৃথিবীটাকে হাজার হাজারবার প্রদক্ষিণ করতে ইচ্ছা করে। প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছিল, তুমি একজন আবেগতাড়িত প্রজাপতির প্রহর। কী ভয়ংকর সুন্দর তুমি! তোমায় দেখার পর থেকে বিষণ্নতায় ছেয়ে গেছে আমার মনের আকাশ। তুমি সেই নাম না জানা ফুলের মতোই সুন্দর, যা দেখে আমি বারবার চমকে উঠি। আজও প্রতিটি ক্ষণে হৃদয়ে যে পরম সত্যটি অনুভূত হচ্ছে, তা হলো তুমি আমার ‘শেষের কবিতা’র ‘অন্তু’। তুমি বৃষ্টিভেজা ঘাসের মতো সুন্দর। তোমার চঞ্চলময় পথচলা আর মিষ্টি–মধুর কথা বলা আবেগময় করে তোলে আমায়।
জানো অন্তু, দিনের সূর্যের কাছে যেমন রাতের অন্ধকার ম্লান হয়ে যায়, তেমনই দাম থাকে না চাঁদের আলোর। কিন্তু আজ তোমায় দেখে বুঝতে পারলাম, রহস্যময়ী সৌরজগতের মতো বিধাতাও কিছু পার্থিব জিনিসকে লুকায়িত রেখেছে এই পৃথিবীতে, যা এককথায় অতুলনীয়। যার কাছে হার মেনে যায় প্রভাতের সূর্য, নিশিরাতের চাঁদের আলো। তোমার মধ্যে কোটি কোটি তারা আলোকোজ্জ্বলতার সন্ধিপথ খুঁজে পায়। তেমনি আজ তোমার চোখের ঝলকানিতে সুরভিত হয়েছি আমি। তোমার ওই চোখের ঝলক আমাকে দিশাহারা করে দেয়। তোমাকে যতই দেখি, মুগ্ধতা ততই বেড়ে যায়।
বেশি কিছু চাই না! আমার হাতে শুধু তোমার হাতটা চাই। মানুষ বলে তিন দিনের দুনিয়া, আমি এই তিন দিনই তোমাকে চাই…
যখন আমার দৃষ্টির সীমানায় আসো, তখন তুমি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেবী হিসেবে আমার দৃষ্টিতে উপনীত হও। শেক্সপিয়ার, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ আর শরৎবাবুদের কতই–না দুর্ভাগ্য, তাঁরা বেঁচে থাকলে জুলিয়েট, হৈমন্তী, বনলতা আর বিলাসীর জায়গায় তোমার নামে চরিত্র সৃষ্টি করতেন। তোমার ভালোবাসায় আমি সিক্ত হতে চাই। তোমার গোলাপের মতো পাপড়ি ঠোঁটে একচিলতে হাসি দেখার জন্য অতৃপ্ত মন আজ উন্মাদ। জগতের মধ্যে কত বিচিত্র তুমি। জীবনানন্দের বনলতা সেনকে আমার দেখার সৌভাগ্য না হলেও তোমাকে দেখে আমি ধন্য। তোমাকে দেখার পর মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরের চেয়েও সুন্দর তুমি।
অন্তু, তোমার চোখের গভীরতায় যে কতশতবার ডুব দেওয়া যায়, তা কি তুমি জানো? হয়তো তুমি আয়নায় শুধু কপালের ওই সুন্দর টিপটাই দেখো। নিজের কাজল পরা চোখের দিকে তাকিয়ো একবার, হারিয়ে যাবে নিজের মধ্যে। তোমার চুলগুলো যখন বাতাসের ঝাপটায় দোল খাবে, তখন যেকোনো মানুষের হৃদয়ের স্পন্দনে যে কী রকম হবে, সেটা বলে বোঝানোর মতো নয়। চোখ বন্ধ করলেই তোমাকে দেখি, চোখ খুললেই তোমাকে দেখার ইচ্ছা হয়। তুমি আছ আমার অনুভবে, আমার প্রতিটি নিশ্বাসে আর অনুভূতিজুড়ে। একে প্রেম বলো, পাগলামি কিংবা বন্ধুত্ব—সব মিলে তুমি আমার হৃদয়ের অনুভূতি।
আমি তো তোমাতেই বিভোর হয়ে থাকতে চাই। তুমি আমার হৃদয়ে অঙ্কন করেছ তোমার বন্ধুত্বের ভালোবাসার গাঢ় রঙের রংতুলি দিয়ে। তোমার মিষ্টি মুখখানা দেখলে জীবনের সব তিক্ততা নিমেষেই বিলীন হয়ে যায়। তীব্র একধরনের ভালো লাগা কাজ করে হৃদয়ে। মনে হয়, তুমি আমার শত জনমের চেনা। বাতাসে বাতাসে তোমার হাসির মিষ্টি তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। একপশলা বৃষ্টির পর একচিলতে মিষ্টি রোদ যেমন প্রকৃতিতে এক সজীবতার অনুরণন ঘটায়, তেমনি তোমার আবেশে আমার হৃদয় আলোড়িত করে। তোমার হৃদয়ের আলোর কিরণ কখন যে আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছে, বুঝতে পারিনি। তোমাকে নিয়ে ভাবতে বসলে কোথায় যে হারিয়ে যাই, বুঝি না। আনমনে খুঁজে বেড়াই নিজেকে তোমার হৃদয়ের কল্পনার রাজ্যে।
বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা দ্বারা জগতের সৃষ্টি। একমাত্র বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাই পারে দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে। কথাটি কোনো সিনেমা বা নাটকের ডায়ালগ নয়। চরম ও পরম সত্য আর এই টুকরো টুকরো সত্যের বুননে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার বিশাল এক পাহাড়, বিরাট এক সমুদ্র; যার কোনো পতন নেই। নেই কোনো ক্ষয়।
সর্বসাধারণে আশীর্বাদপুষ্ট নই! রক্তশোভিত পাষাণের করাঘাতে আমি মানুষ নই, পুরুষ! অমানুষের দরবারে আমার গমন নেই—ক্ষণে ক্ষণে রক্তিম দেহ লুটিয়ে পড়ে, মানুষের অগোচরে, আমার করুণ মৃত্যুমিছিলে আমিও দাঁড়াতে পারি না! মহাকষ্টে আত্মাহুতিতে সমাজের কীবা আসে! আমার পরিচয় বদল করো প্রিয়! আমি মানুষ নই, মানুষের দাবি করি না। আমার নতুন পরিচয় দাও।
বাস করছি জীবনের গোলকধাঁধার মধ্যে। ভাগ্য সেখানে কী হবে? ছক্কার ঘুঁটির ১, ২, ৩ নাকি আকাশকুণ্ডলী ৬?
বলো না একটু...পারব তো বাধা-প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে? মেঘলা আকাশ, কুয়াশাচ্ছন্ন জীবনে সূর্য মামার উপস্থিতি জানতে চেয়েছি। তবু আশার আলোতে ভরা সেই স্বপ্নে ভেসেছি। নাকি একাকিত্ব আর নীরবতা-নিস্তব্ধতা ধুয়েমুছে কয়লার কালিতে রূপ নেবে?
কেমন হয়, জীবনটা যদি শেষ থেকে হয় শুরু! হঠাৎ জীবনে এসে কেউ যদি বাড়ায় ভালোবাসার হাত। আমি ফিরিয়ে দেব না ঠিক, কিশোর হয়ে যাব সেই কৈশোরের মতো। হঠাৎ গোলাপ হাতে সামনে এসে দাঁড়াও, আমি হারিয়ে যাব তোমার আবেশে, একটু ছুঁলেই শেষ। কেমন হয়, যদি কেউ স্বপ্ন দেখায়, চলতে শেখায় নতুন করে পথ; আমি গভীর বিশ্বাসে আগলে রাখব তাকে আবারও শেষ থেকে শুরু করার অদম্য ইচ্ছায়।
অন্তু, আমি তোমার অসংজ্ঞায়িত হৃদয়ের মায়ায় পড়েছি। ধীরে ধীরে তোমাকে ভাবতে ভাবতে হয়তো খুব আপন ভেবে ফেলেছি। তোমার অসংজ্ঞায়িত হৃদয়কে সংজ্ঞায়িত করতে চাই। তোমার প্রতি আমার বন্ধুত্বের ভালোবাসা নিখাদ স্বর্ণের মতো, যা অতীতে পুড়তে পুড়তে আরও বেশি খাঁটি হয়ে উঠেছে। আমি পুড়ছি, প্রতিনিয়ত পুড়ছি, আরও খাঁটি হয়ে উঠছি বোধ হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরতের অনুপম সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে লিখেছেন—
‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ,
আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা––
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।।
এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে,
এসো নির্মল নীলপথে।’
কাজী নজরুল ইসলাম আনমনে গেয়েছেন—
‘এসো শারদ প্রাতের পথিক
এসো শিউলি বিছানো পথে,
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে
এসো অরুণ-কিরণ-রথে।।’
‘চোখে চোখে শুধু চাওয়া, তাই চোখের জলে তোমার–আমার ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া। সখী ভালোবাসা কারে কয়?’ সত্যিই এই অনিশ্চয়তা, আপেক্ষিকতা, উপেক্ষা ও প্রতীক্ষার মধ্যে ভালোবাসাটা ঠিক কোথায়? তবু ভেবে যাই, তোমাকে পেতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, শেষবার তোমার আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে দেখতে চাই। কারণ, কখনো না কখনো শেষবার আমি তোমাকে দেখব, কখনো না কখনো শেষবার তোমার প্রেমে পড়ব। কখনো না কখনো কাউকে ভালোবাসার প্রয়োজনে আমি তোমায় ভালোবেসে থামব।
আমার সুপ্ত অনুভূতিগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য তোমার হৃদয়ের বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা প্রয়োজন। অনেক বেশি প্রয়োজন অন্তু তোমাকে। হে আমার হৃদয়েশ্বরী অন্তু, আমি যেখানেই থাকি না কেন, এ হৃদয়ের রাজত্ব শুধুই তোমার।
বেশি কিছু চাই না! আমার হাতে শুধু তোমার হাতটা চাই। মানুষ বলে তিন দিনের দুনিয়া, আমি এই তিন দিনই তোমাকে চাই…
ইতি
তোমার প্রিয় স্বপ্নবিলাসী
তেলিহাটী, শ্রীপুর, গাজীপুর