বারবার লড়ছে সুন্দরবন একাই

সুন্দরবনফাইল ছবি

২০১৯ সালের নভেম্বর। তখন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করি। ঘুরতে গিয়েছিলাম কলকাতায়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব তখন সবে শেষ হয়েছে। সকালে নাশতার টেবিলে চোখে পড়ল আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় বড় করে কালো কালিতে লেখা হেডলাইন, ‘এবারও বুক চিতিয়ে দিল সুন্দরবন’।

গুগল বা সে সময়ের বাংলাদেশ ও ভারতের পত্রপত্রিকা ঘাঁটলে এখনো পাওয়া যাবে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর আঘাত বুক পেতে নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশকে কীভাবে রক্ষা করেছিল প্রাকৃতিক বেষ্টনী বলে পরিচিত সুন্দরবন। সুন্দরবনের কারণেই শক্তি হারিয়ে লোকালয়ে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। বুলবুলের কারণে ভারত ও বাংলাদেশ—দুই দেশেরই সুন্দরবনের বেশ ভালোই ক্ষতি হয়েছিল। বাংলাদেশের দিকে সুন্দরবনের কীরূপ ক্ষতি হয়েছিল, তা নিরূপণ করেছিল বন বিভাগ। সংশ্লিষ্ট স্টেশন ও ফাঁড়ির সাহায্যে করা ওই জরিপে দেখা গেছে, বুলবুলের প্রভাবে সুন্দরবনে ৪ হাজার ৫৮৯টি গাছ উপড়ে পড়েছিল। বন বিভাগের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিল ৬২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে এর আগেও বাংলাদেশে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন, বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের পানিতে প্লাবিত হয় গোটা সুন্দরবন। ধীরে ধীরে সুন্দরবনের ক্ষত স্পষ্ট হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

আজকের মানবজমিন পত্রিকার শিরোনাম ‘এবারো বুক চিতিয়ে লড়লো সুন্দরবন’। প্রথম আলোর সংবাদ বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের পানিতে প্লাবিত হয় গোটা সুন্দরবন। এতে বন্য প্রাণী ও বনজীবীদের জন্য করা মিঠাপানির পুকুরগুলোতে ঢুকে পড়েছে সাগরের লোনাজল। মিলছে হরিণের মৃতদেহ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন বিভাগের অফিস, কর্মীদের থাকার জায়গা, জেটিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এখনো উত্তাল বঙ্গোপসাগর ও সাগর উপকূলীয় বনের নদীগুলো। ফলে বনের সব এলাকায় যেতে পারছেন না বনকর্মীরা। তাই কী পরিমাণ বন্য প্রাণীর ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কোনো ধারণা দিতে পারেনি বন বিভাগ।

এত কথা লেখার একটাই কারণ যে সুন্দরবন মায়ের মতো আগলে রেখেছে বাংলাদেশকে। যে সুন্দরবন দফায় দফায় বুক চিতিয়ে লড়াই করছে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে, সে সুন্দরবনকে কতটা আগলে রাখতে পারছি আমরা? এ প্রশ্ন রয়েই যায়। সুন্দরবন যেভাবে উপকূলকে রক্ষা করেছে, তাতে এই বনাঞ্চল টিকিয়ে রাখাটা কত জরুরি, সেটা আমরা এখনো অনুধাবন করতে পারছি না। বুঝতে পারছি না বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনকে টিকিয়ে রাখার দায় আমাদের ওপরই বর্তায়। সে কারণেই রিমাল, আইলা বা বুলবুল–এর হাত থেকে সুন্দরবনকেও বাঁচাতে হবে সুন্দরবনকে রেখেই।

উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা