দিল্লির তাপমাত্রা ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস চলছে। গাছপালা ঝলসে যাচ্ছে। ছাদে গেলেই শরীর যেন জ্বলছে। ছুটে নেমে আসছি তাই।
ব্যালকনিতে বসে কয়েক দিন আগেও দেখেছি, ছেলেমেয়েরা মায়েদের সঙ্গে সকালে স্কুলে যাচ্ছে। আবার দুপুরে বাড়ি ফিরছে। কি প্রাণোচ্ছল! খুব ভালো লাগত। তাদের চঞ্চলতা দেখে নিজেই যেন চাজর্ড হয়ে যেতাম। বাঁচার উৎসাহ পেতাম। রাস্তায় দৌড়াচ্ছে। মায়েরা বকছেন। সন্তানের হাত টেনে ধরে এগিয়ে চলেছেন। মায়েরা তো এভাবেই টেনে রাখেন। সঙ্গে থাকেন। সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যান। এভাবেই যে মায়েদের মাতৃত্ব সফলতা পায়। এতেই তো পূর্ণতা। কেউ কেউ আবার পথের মধ্যেই দাঁড়িয়ে বোতল খুলে ঢক ঢক করে পানি খায়। খানিকটা তো গায়েই পড়ে যায়। তারা উন্মুক্ত। মায়েরা তাদের বই-খাতাভর্তি ব্যাগগুলো নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। ইউনিফর্ম পরা তাদের দেখে নিজের শিশুকাল মনে পড়ে। আমরা অবশ্য সকালে স্কুলে গিয়ে দুপুরে আসতাম না। সময়টা অন্য ছিল। কেবল বৈশাখ মাসে মর্নিং স্কুল হতো।
এখন দিল্লির পথেঘাটে শিক্ষার্থী ও তাদের মায়েরা নেই। প্রচণ্ড গরম পড়েছে। কত ফেরিওয়ালা হাঁকত, এখন গণাকতক। কত গরু রাস্তায় হাঁটত। কোথা থেকে আসত জানি না। কোথায় যেত তা-ও জানি না। এখন তারাও আর রাস্তায় আসে না। কুকুরগুলো আনাচকানাচে, বাড়ির গেটের আশপাশে ছায়ায় ধুঁকছে। অথবা দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের নিচে শুয়ে আছে। পাখিরা উড়ছে না, ডাকছে না। বাড়ির ব্যালকনির ভেতরে ঢুকে চুপচাপ থাকছে।
এসি চালিয়ে বন্ধ ঘরে বসে এসব অহেতুক টাইপ করছি। মাঝেমধ্যেই উঠে গিয়ে ডিপ ফ্রিজ খুলে বরফ খাচ্ছি। আর ভাবছি যে এটি রাজধানী, এ রকম নাজেহাল দশা! রাজারা যেখানে থাকে তা-ই নাকি রাজধানী। হীরার সঙ্গে থাকতে থাকতে অতিসাধারণ পাথরেও হীরার গুণ নাকি চলে আসে। হা হা হা, নিজেকেও বেশ রানি রানি ভাবছি! তবে মিডিয়া কেন যে ওই সব রাজার বর্তমান অবস্থার কোনো প্রচার করছে না? তারাও কি সাধারণ নাগরিকেরই মতো ঝলসাচ্ছে? কি জানি! হয়তো অতি ঠান্ডা ঘরে নাক ডাকছে! আমিও এসি চালাই বটে; তবে বিদ্যুৎ বিল অনেক দিতে হবে বলে প্রায়ই সুইচ বন্ধ করছি। রাজারা তো আর আমাদের মতো বিল-টিল নিয়ে অতশত ভাবার সময়ই পান না! গরমে মাথাটাই গুলিয়ে গেছে রে!
বাথটাবে ডুবে স্নান করে উঠে ট্যাপ থেকে তামার ঘটে জল ভরে আনলাম। দুপুরে সেটা ঠাকুরঘরে রেখে দিলাম। ঠান্ডা হলে বিকেলে শিবের মাথায় ঢালব।
আমার গাছে অনেক বেলি ফুটেছে। সুবাস পাচ্ছি। এরা কিন্তু ঠিকই গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি হাসছে। কেউ তো টক্কর দিচ্ছে। প্রতিকূলতায়ও সুবাস ছড়ানো যায়। এরা এটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
জানি না কবে যে দিল্লি বৃষ্টিতে ভিজবে। আমি তো খুব করে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করলাম। কি জানি তিনি শুনতে পেলেন কি না? সত্যি সত্যি ঠাকুর এবার বৃষ্টি দিন। আমাদের দিল্লিবাসীদের ওপর কৃপা করুন!
মরুর দেশে কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঝরানো হয়। আমাদের দেশেও কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঝরানো হলে জনগণ খুবই স্বস্তি পেত। কিন্তু তা তো শুধুই দিবাস্বপ্ন। আমাদের দেশ বিনোদন খাতে অসংখ্য রুপি ব্যয় করে। আর সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যবিষয়ক ব্যাপারে উদাসীন। মরীচিকাসম মিছে আশা অতি উষ্ণতায় জাগ্রত চেতনায় প্রলাপ জাগাচ্ছে।
একে তো বয়স, তার ওপর গরম—সব সময়ই গা বমি বমি করছে, খাওয়ায় অনীহা। অথচ না খেয়ে থাকতেও পারি না, অ্যানিমিয়া বেড়ে যায়। কোনো প্রকারে দৈহিক চাহিদা পূরণের জন্য গলা দিয়ে নামাচ্ছি। বাড়িতে বসানো টক দই মেখে একগাল ভাত।
নয়াদিল্লি, ভারত