কুয়াশাভেজা পড়ন্ত বিকেলে

কুলিয়ারচরের কালনী ব্রিজে লেখকছবি: সংগৃহীত
সে গানের সুরে জবার দিল, ‘চলো না যাই, বসি নিরিবিলি। দুটি কথা বলি নিচু গলায়।’

নতুন বছরে জানুয়ারি মাসের ভীষণ ব্যস্ততা যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক কাজ, কোচিং, বন্ধুসভার কাজ সবকিছু মিলিয়ে যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার ফুরসত পাচ্ছিলাম না। অবশেষে ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার সেই সুযোগ এল। নাফিস, আদিব ও প্রিয়াংকার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের ঘোরাঘুরি শুরু হয় নাফিসকে কেন্দ্র করে। নাফিস যখন ঢাকা থেকে ভৈরব আসে, তখন প্রতিদিন আমরা বেরিয়ে পড়তাম। এবারের গন্তব্য কুলিয়ারচর।

বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি নিলাম। সিএনজি ছাড়ার পর আদিব খুশিতে হাততালি দিতে লাগল। ওর খুশি দেখে আমাদেরও মন আনন্দে নেচে উঠল। পানির ওপর পশ্চিম আকাশের সুয্যি মামার প্রতিফলন দেখতে দেখতে যেতে লাগলাম। এই রাস্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক অম্লমধুর স্মৃতি। ভাবনায় ভেসে বেড়াচ্ছে কতশত স্মৃতি। প্রিয়াংকা কথায় সেই ধ্যান ভাঙল—
‘মনে হচ্ছে অনেক দিন পর বের হলাম, তাই না?’
‘হ্যাঁ, বিকেলবেলার এ রাস্তাটা মনে হচ্ছে কত দিনের চেনা।’
‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?’
‘দ্রুত শেষ হোক, বদ্ধ সিএনজিতে একদমই ভালো লাগছে না।’
‘যখন একটু গরম পড়বে, রিকশা করে আসব।’
‘তখন এই পথ একদমই শেষ না হোক, এটাই চাইব।’

প্রিয়াংকার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল সে হাসিটা, যার প্রেমে পড়েছিলাম। আদিব ওর চিপসের প্যাকেট থেকে চিপস দিচ্ছে আমাদের। চিপসের সঙ্গে প্রিয় মানুষদের নিয়ে শীতে ভেজা প্রকৃতি অবলোকন করতে করতে পৌঁছালাম দারিয়াকান্দি বাজারে। প্রিয়াংকার ইচ্ছা পূরণ করতে এবার রিকশা করে কুলিয়ারচর পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে শুরু করছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল শীতের আবহ। আমরা কুলিয়ারচরের কালনী ব্রিজে হাঁটার জন্য নামলাম।

সময়ের পরিবর্তনে ব্রিজ হারিয়েছে তার সৌন্দর্য। নদীটাও প্রায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নাফিস ও প্রিয়াংকা এই নিয়ে বেশ আক্ষেপ করল। ব্রিজে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আমরা চললাম বাজারের দিকে। আকাশে একঝাঁক পাখিদের ভিড়, আজ বাজারে হাট বসেছে। বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। প্রিয়াংকা কিনল কয়েক প্রকারের শুঁটকি মাছ। এরপর এরাবিয়ান তৃপ্তি রেস্টুরেন্টে চাপ ও নান রুটি খেলাম। আদিব বেশ মজা করে রুটি আর মাংস খাচ্ছিল। খাওয়া পর্ব শেষ করে আমরা আবারও বেরিয়ে পড়লাম। প্রিয়াংকাকে বললাম—
‘এবার কোথায় যাবে?’
সে গানের সুরে জবার দিল, ‘চলো না যাই, বসি নিরিবিলি। দুটি কথা বলি নিচু গলায়।’

মাঝেমধ্যে কবিতা আর গানের মতো কথা বলে প্রিয়াংকা, যা আমার ভীষণ ভালো লাগে। কুলিয়ারচর সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি নিলাম। এখনো কুয়াশা পড়তে শুরু করেনি, ঠান্ডা হাওয়া এসে গায়ে লাগছে। প্রিয়াংকার পছন্দের ঋতু শীতকাল। তাঁর ভাষ্যমতে, শীতের দিন শীত না করলে কী হবে বলো? প্রচুর শীত করতে হবে, একেবারে হাড়কাঁপানো শীত যাকে বলে। তারপর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দেব, শীতের পিঠাপুলি খাব—এটাই তো শীতের মজা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা চলে এলাম ভৈরবে। বাসস্ট্যান্ডে নেমে সবাই মিলে হাঁটা দিলাম ভৈরব বাজারের উদ্দেশে। আজকের ঝটিকা সফরটা মনের মধ্যে গেঁথে থাকবে। সিদ্ধান্ত নিলাম মাঝেমধ্যে এ রকম হুট করে বেরিয়ে পড়লে মন্দ হয় না।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা