বাংলার ঋতুচক্রের অন্যতম মনোরম ঋতু হেমন্তকাল। শরতের শেষে এবং শীতের আগমনের মধ্যে এ ঋতু এসে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে নতুনরূপে। হেমন্তকাল বাংলার ষড়ঋতুর পঞ্চম ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসজুড়ে থাকে। এই সময়ে প্রকৃতির রূপে, ফসলে, মানুষের জীবনে এবং গ্রামীণ পরিবেশে এক বিশেষ পরিবর্তন দেখা যায়।
হেমন্তের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শীতের হালকা পরশ। দিনের তাপমাত্রা নাতিশীতোষ্ণ হলেও রাতে ঠাণ্ডার আমেজ থাকে। নদী, খাল, বিলের পানি কমে আসে এবং শীতল হাওয়ায় প্রকৃতি যেন ধীরে ধীরে শীতের প্রস্তুতি নেয়। গাছের পাতা ঝরতে শুরু করে, মাঠ-ঘাট হয়ে ওঠে শুকনা। কৃষকদের জন্য এটি ব্যস্ততম ঋতু, এ সময় ধানকাটার মৌসুম।
এই ঋতুতে মাঠজুড়ে সোনালি ধান থাকে। কৃষকেরা মাঠে নতুন ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নতুন চাল থেকে তৈরি হয় পিঠা-পায়েস। নতুন ফসলকে ঘিরে গ্রামীণ এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
হেমন্তকাল প্রকৃতির পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের মনকেও পরিবর্তিত করে। হালকা শীতের ছোঁয়ায় সকালের কুয়াশা, দুপুরের মিষ্টি রোদ এবং সন্ধ্যার শীতল বাতাস এক বিশেষ অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ধীরে ধীরে প্রকৃতি শীতের প্রস্তুতি নিতে থাকে। হেমন্তের রূপ ও সৌন্দর্য মানুষকে আপ্লুত করে রাখে।
এই ঋতুর প্রকৃতি ও আবহাওয়া, ফসলের ঋতু এবং মানুষের জীবনে এর প্রভাব বাংলার সংস্কৃতি ও সাহিত্যে বারবার ফুটে উঠেছে। হেমন্তের এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ বাংলার মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
ধামরাই, ঢাকা, ১৩৫০