অলস পড়ে আছে চিঠির বাক্সগুলো

মনের কথা যত্ন করে লিখে প্রিয়জনের ঠিকানায় চিঠি পাঠানোর যুগ না থাকলেও লাল-নীল ও হলুদ ডাকবাক্স এখনো দেখা মেলে। চট্টগ্রাম জিপিওছবি: তারানা তানজিনা মিতু

‘নাই টেলিফোন, নাই রে পিয়ন, নাই রে টেলিগ্রাম/ বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম...।’ একসময় প্রায়ই রেডিওতে শোনা এ রকম কালজয়ী গানের সঙ্গে দিনবদলের পালায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে ডাকযোগে চিঠিপত্রের ব্যবহার। সেই সঙ্গে কদর কমে গেছে বহুল ব্যবহৃত ডাকবাক্সের। অলস পড়ে থাকা চিঠির বাক্সগুলোয়ও মরিচা পড়ে যাচ্ছে।

আধুনিক যুগের মতো মোবাইল ও ইন্টারনেট ছিল না বলে একসময় মানুষের সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল ফ্যাক্স ও ডাক। আজ থেকে মাত্র ১৫ বছর আগেও পাড়া–প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন অথবা অতি আপনজন দূরদূরান্ত থেকে ফ্যাক্স কিংবা ডাকযোগে চিঠিপত্রের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ ও খোঁজখবর নিতেন। আর্থিক লেনদেনও করা হতো ডাকের মাধ্যমে। মা–বাবা, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, কিংবা প্রিয় মানুষের চিঠির অপেক্ষায় থাকতেন। প্রহর গুনতেন কখন আসবেন ডাকপিয়ন। প্রিয় মানুষটি অথবা অতি আপনজনের সেই চিঠি হাতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হতেন অপেক্ষারত ব্যক্তি। চিঠি হাতে নিয়ে কতই না স্বপ্নে বিভোর থাকতেন প্রেমিক-প্রেমিকা। স্ত্রী তাঁর স্বামীর চিঠির অপেক্ষায় থাকতেন, মা থাকতেন ছেলের। প্রেমিক–প্রেমিকাও থাকতেন চিঠির অপেক্ষায়। তখনকার দিনের সেই আনন্দ–অনুভূতি ছিল অন্য রকম।

প্রযুক্তির বিবর্তনে এখন আর শহর কিংবা গ্রামগঞ্জে ডাকযোগে চিঠিপত্রের ব্যবহার নেই। তাই তো আনাচকানাচে ডাকবাক্সগুলো অলস পড়ে আছে। কেউ চিঠি দিচ্ছেন না, চিঠি নেওয়ার জন্য বাক্সও খুলছেন না।

বাংলাদেশ এখন প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে। উন্নত পরিসরে চলছে মানুষের সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থা। এখন মানুষ ডাকযোগে যোগাযোগের মাধ্যম পরিহার করে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ই-মেইল কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ করে থাকে। এসবের ব্যবহার চলছে জোরালো গতিতে। তাই মানুষ এখন ভুলে গেছে সেই পুরোনো আমলের ডাকযোগে চিঠিপত্রের কথা। এখন গ্রামগঞ্জে পোস্ট অফিস থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। চিঠিপত্র জমা রাখার বাক্স থাকলেও বাক্সে নেই কোনো চিঠি। এভাবেই প্রযুক্তির বিকাশে ও যোগাযোগমাধ্যমের উন্নতি সাধনে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি আদান-প্রদানের রেওয়াজ।

বন্ধু, ড্যাফোডিল বন্ধুসভা