পিএসজিতে লুইস এনরিকের যে সমস্যাগুলোর সমাধান করা প্রয়োজন

পিএসজির নতুন কোচ লুইস এনরিকেছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের জন্য স্পেনের দল ঘোষণা। অন্যান্য দেশের কোচরা যখন সংবাদ সম্মেলন করে স্কোয়াড ঘোষণা করছেন, তখন স্পেন কোচ লুইস এনরিকে চললেন উল্টোপথে! সংবাদ সম্মেলন তো করেননি, তার ধারেকাছেও না গিয়ে দল ঘোষণা করলেন খালি রাস্তায় সাইকেল চালাতে চালাতে! যে দলে রাখা হয়নি বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার সের্হিও রামোসকে। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। তবে সেসব এখন অতীত।

বিশ্বকাপের পরপরই স্পেন জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান লুইস এনরিকে। আসছে নতুন মৌসুমে পিএসজির ডাকআউটের দায়িত্ব নিয়েছেন। দুই বছরের চুক্তিতে প্যারিসে নতুন ঠিকানা গড়েছেন তিনি। স্পেনের আগে বার্সেলোনার কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই স্প্যানিশ। বেশ সফল ছিলেন তিনি। ক্লাবকে ট্রেবল শিরোপাও জিতিয়েছিলেন। তবে এবারের নতুন দায়িত্ব তাঁর জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে।
প্যারিসে সফল হতে হলে বেশ কয়েকটি বড় সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে।

চোট কাটিয়ে পিএসজির ট্রেনিংয়ে ফিরেছেন নেইমার
ছবি: এএফপি

পুরোনো নেইমারকে ফিরিয়ে আনা:
নতুন মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। তবে এরই মধ্যে চোট কাটিয়ে পিএসজির ট্রেনিংয়ে ফিরেছেন নেইমার। ৩১ বছর বয়সী এই প্লে–মেকার এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা। নিজের দিনে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে কাঁপন ধরিয়ে দিতে সক্ষম। নিজে গোল করা এবং সতীর্থদের দিয়ে গোল করানো—দুটোতেই সমান দক্ষ তিনি।

প্যারিসে এত বছর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। যাঁর কাজ হচ্ছে পুরো মাঠে দৌঁড়ানো, ড্রিবলিং করা, পাস দেওয়া, শট নেওয়া এবং আনন্দ দেওয়া। কিন্তু এটা দেখতে চোখের শান্তি হলেও দলের সাফল্যে বড় প্রভাব পড়ত না।
এখন দেখার বিষয়, লুইস এনরিকে নেইমারকে কী হিসেবে খেলান। অবশ্য দুজনের পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। বার্সেলোনার সর্বশেষ ট্রেবল জয়ের দলটির অন্যতম বড় তারকা ছিলেন নেইমার। আর সেই দলের কোচ ছিলেন এনরিকে। তাই দুজন দুজনের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো বেশ ভালোভাবেই চেনেন। শিষ্যকে এমনভাবে খেলাতে হবে, যাতে তিনি ইনজুরিতে না পড়েন। তাহলেই সাফল্য আসবে।

পিএসজির কট্টর সমর্থক গোষ্ঠী
ছবি : এএফপি

সমর্থকদের মন জয় করা:
তারকা খেলোয়াড়দের সম্মান করতে জানেন না বলে পিএসজির সমর্থকদের দুর্নাম রয়েছে। যার সর্বশেষ শিকার লিওনেল মেসি। তাঁকে নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রায়ই দুয়োধ্বনি উঠত। প্যারিস ছেড়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার পেছনে এটাও অন্যতম কারণ।

এই তো গত মৌসুমের শেষ দিকে প্যারিসে নেইমারের বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ করেছেন সমর্থকেরা। তাঁরা ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দলে আর দেখতে চান না। বিষয়টি নিয়ে নেইমার তীব্র অসম্মানিত হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবর।
এর বাইরে প্যারিসের সমর্থকেরা সাধারণত ফরাসি কোচদেরই বেশি পছন্দ করেন। অন্যদিকে লুইস এনরিকে স্প্যানিশ এবং ফ্রান্সে এর আগে কখনো কাজ করেননি। তাই সমর্থকদের মন জয় করা তাঁর জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং হবে।

মার্কো ভেরাত্তি
ছবি: টুইটার

মধ্যমাঠ শক্তিশালী করা:
পিএসজির মধ্যমাঠ কখনোই শক্তিশালী ছিল না। ঘরোয়া লিগে সাফল্য পেলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে বারবার হোঁচট খাওয়ার অন্যতম কারণ এটি। দলটিতে বিশ্বমানের একমাত্র মিডফিল্ডার বলতে আছেন কেবল ইতালিয়ান মার্কো ভেরাত্তি। এর বাইরে এরই মধ্যে নতুন মৌসুমের জন্য উরুগুয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল উগার্তে ও দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার লি কাং-ইনকে দলে ভেড়ানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভেরাত্তির সঙ্গে উগার্তের প্রথম একাদশে থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবু ঠিক ব্যালান্স হচ্ছে না। আরও এক বা দুজন খেলোয়াড় লাগবে।

অবশ্য এখনো সময় আছে। ম্যানচেস্টার সিটি থেকে বার্নান্ডো সিলভাকেও নিয়ে আসার গুঞ্জন রয়েছে। তবু শক্তিশালী মধ্যমাঠ সাজাতে বেশ বেগ পোহাতে হবে স্প্যানিশ কোচকে।

পিএসজির অনুশীলনে কিলিয়ান এমবাপ্পে
ছবি: এএফপি

এমবাপ্পেকে সুখী রাখা
পিএসজির সঙ্গে আগের মতো আর সুখের সম্পর্ক নেই কিলিয়ান এমবাপ্পের। তাঁকে এই মৌসুমেই বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে ফরাসি ক্লাবটি। অন্যদিকে ফ্রান্স অধিনায়কের ইচ্ছা আরও এক মৌসুম প্যারিসে খেলে তারপর ফ্রি এজেন্ট হয়ে অন্যত্র পাড়ি জমানো। তা ছাড়া সম্প্রতি পিএসজি সম্পর্কে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করে এরই মধ্যে দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও ঘোলাটে করে দিয়েছেন এমবাপ্পে।

শেষ পর্যন্ত যদি কিলিয়ান এমবাপ্পে আরও এক মৌসুম প্যারিসে থেকে যান, সে ক্ষেত্রে দলের সাফল্য পেতে হলে তাঁকে সবার আগে সুখী রাখতে হবে। আর এটা সহজ হবে না। এমবাপ্পে এমন একজন ফুটবলার, যিনি যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল আদায় করে নিতে সক্ষম।