প্রথম আলোর সঙ্গে পথচলা ও আমার লেখালেখি
ছোটবেলায় আমাদের বাসায় প্রতিদিন সকালে একজন মুরব্বি একটি পত্রিকা রেখে যেতেন, প্রথম আলো। কখনো ছুঁয়েও দেখিনি। রাতে পরিবারের সবাই মিলে যখন একসঙ্গে আড্ডা দিতাম, বাবা বলতেন পত্রিকা পড়লে নতুন অনেক কিছু জানা যায়। সেই থেকে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। তখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। খেলার পাতা, পড়াশোনার পাতা, ম্যাগাজিন, স্বপ্ন নিয়ে—এগুলো থাকত আমার দখলে। পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন ফিচার ও গল্প যত্ন করে রেখে দিতাম। ডায়েরিতে নিজের কথাগুলো লিখে রাখতাম। আম্মু খুব ভালো গল্প লিখতে পারেন। তাঁর কাছ থেকে গল্প লেখার হাতেখড়ি।
পত্রিকায় বড় আকারে যখন কারও নাম আসত, মনে মনে বলতাম—‘ইশ, যদি পত্রিকার ভাঁজে আমার নামটাও আসত।’ সেদিন থেকে পত্রিকায় লেখার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু থাকি গ্রামে। কীভাবে কী করতে হবে, জানতাম না। জেলা পর্যায়ে কিছু অনলাইন পত্রিকা ছিল। এক বন্ধুর মাধ্যমে সেগুলোতে লেখা পাঠানোর মেইল সংগ্রহ করি। অনেক পত্রিকায় লেখা পাঠাই, কেউ ছাপত না। মন খারাপ হতো। ভাবতাম আমাকে দিয়ে হবে না হয়তো। তখন লেখালেখি বাদ দিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম।
মাধ্যমিক শেষে উপন্যাস লেখা শুরু করি। পাণ্ডুলিপি গোছানো প্রায় শেষ। কিন্তু কীভাবে ছাপানো যায়? একটা প্রকাশনীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা বলল, টাকা লাগবে। এরপর বাদ দিলাম বই ছাপানোর চিন্তা। কেন জানি নিজেকে অপূর্ণ মনে হলো। একটা লেখাও কোথাও ছাপাতে পারলাম না। অপূর্ণতা রয়ে গেল। কিছুদিন পর বাড়ি ছাড়ার সময় হলো। উচ্চমাধ্যমিকে পড়তে শহরে পাড়ি দিলাম।
তখন সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। একদিন পত্রিকা পড়তে গিয়ে চোখে পড়ল ‘আপনি গল্প, ফিচার লিখতে পারলে এই ঠিকানায় মেইল করুন।’ আমি লেখা পাঠিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু প্রকাশিত হয় না। দিন পনোরো পর সকাল ৯টায় আম্মুর ফোন। জানালেন তাঁর ছেলের লেখা পত্রিকার পাতায় এসেছে। সে কী আনন্দ! ‘অবুঝ দিনের গল্প’ শিরোনামের লেখাটি প্রথম আলোতে প্রকাশিত আমার প্রথম লেখা। তখন থেকে পত্রিকাটির সঙ্গে আমার পথচলা শুরু।
একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় একবার পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক রচনা ও গল্প লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বেলাল সাইদ স্যারের পরামর্শে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। গল্প লেখা ও রচনা প্রতিযোগিতায় কলেজ শাখা ‘ক’ গ্রুপ থেকে আমি প্রথম হয়েছিলাম। আমাকে নিয়ে সেদিন জেলা পর্যায়ের একটি পত্রিকায় ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল। কলেজের সবাই অভিনন্দন জানায়। এর পর থেকে আমাকে আর থেমে থাকতে হয়নি।
লেখা পাঠাতে লাগলাম জাতীয় পত্রিকাগুলোতে। অংশগ্রহণ করি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। ২০২০ সালের ইয়াং রাইটার্স অ্যাওয়ার্ডে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অর্জন করি। পেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধু গ্র্যান্ডমাস্টার অ্যাওয়ার্ড, মুজিব অলিম্পিয়াড। সবকিছু নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় আরেকটি ফিচার ছাপানো হয়। আমার গোছানো পাণ্ডুলিপি দেখে একটি প্রকাশনী তাদের খরচে বই বের করতে রাজি হয়ে গেল। সবকিছু ঠিক থাকলে ইনশা আল্লাহ ২০২৪ সালের বইমেলায় আসবে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রোদের দিনে রাত নামে’।