মা আর আমি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

গভীর রাতে যখন বৃষ্টি হয়, তখন সবার আগে ঘুম ভাঙে মায়ের! একটা পাতিল নিয়ে দৌড়ে এসে ঢোকে আমার ঘরে, যখন ঘুম ভাঙে, তখন আবিষ্কার করি, আমি আধভেজা!

মা আমার বিছানার তোশক সরিয়ে হাতের পাতিলটা রাখে। টিনের চাল ফুটো হওয়ায় বৃষ্টির জল বিছানাকে আলিঙ্গন করে; এই ফুটো দিয়ে সূর্যের আলো কিংবা জ্যোৎস্না কখনোই আসে না, শুধু আসে জল। চোখের কোণে লেগে থাকা কয়েক ফোঁটা অনাকাঙ্ক্ষিত জলের মতো।

মরুভূমিতে জল আবিষ্কার করার পর একটা মানুষ যেমন খুশি হয়, ঠিক তেমনই গভীর রাতে মেঘহীন আকাশ দেখলে মা খুশি হন; আমরা মা-ছেলে বৃষ্টির সময় রাতে ঘুমাই না। সারা রাত গল্প করি, মাঝেমধ্যে বৃষ্টিতে ভিজি; হাসির ছলে চোখের জলগুলোকে বৃষ্টির জলে বিসর্জন দিই, যে জলের কোনো অস্তিত্ব নেই।

টিনের চালটা সারাব সারাব করে সারানোই হচ্ছে না। আমার জমানো টাকা দিয়ে মায়ের রুমের জন্য একটা নতুন ফ্যান কিনেছি। মায়ের গরম সহ্য হয় না। একটু গরম পড়লেই তিনি বিছানা বালিশ নিয়ে উঠানে চলে যান। এরপর আমি কুপিতে কেরোসিন ভরে আগুন জ্বালিয়ে যাই মায়ের কাছে। তিনি বলেন, শুধু শুধু কেরোসিন নষ্ট করছিস কেন? কত সুন্দর চাঁদের আলো! বিধাতার দেওয়া নেয়ামতগুলো উপভোগ করতে শিখ। আমি অন্ধকারে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রই; আকাশে কোনো চাঁদের আলো নেই। মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে পুরো চাঁদটা! কিন্তু আমার মা কেরোসিন ফোরানোর ভয়ে মেঘেদের ভিড়ে চাঁদের আলো খোঁজে। অন্ধকারেই আমরা দুজন গল্প করি। গল্পের মধ্যখানে মেঘেদের সরিয়ে আবার বৃষ্টি নামে; শুরু হয় আবার আমাদের মা-ছেলের যুদ্ধ।