মুক্তির ডাক দিয়ে যায় ‘পোস্টমাস্টার ৭১’

‘পোস্টমাস্টার ৭১’ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন ফেরদৌস আহমেদ ও মৌসুমী
মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত এই চলচ্চিত্র উৎসর্গ করা হয়েছে, সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। যে মুক্তিযোদ্ধারা একটি ফুলকে বাঁচাবেন বলে অস্ত্র ধরেছিলেন। যে মুক্তিযোদ্ধারা ফুল হয়ে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিদিন ফোটেন।

‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত/ ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,/ নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায় তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা’। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন বরেণ্য কবি শামসুর রাহমান। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ চলচ্চিত্রে গ্রামীণ পাকশী সাবপোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার আরিফও স্বাধীন দেশের স্বপ্নের নিশান উড়িয়ে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে মুক্তির ডাক দিয়ে যান।

এই পোস্টমাস্টার হেমন্তের অরণ্যের যেন ভিন্ন এক সত্তা, মানব প্রকৃতির নিবিড় বন্ধনে স্নিগ্ধ সুন্দর লাবণ্যে ভরপুর তার মন। কত মানুষের প্রেমের, প্রাণের বার্তা নিয়ে আসে, নিয়ে যায়। যন্ত্রণা–বিরহ–মিলনের বার্তা ভরা চিঠির খামের ওপর ছপাছপ ছাপ্পা লাগায়। কিন্তু পরাধীন দেশের শোষিত নিপীড়িত জাতির বহু কালের দিনগত পাপক্ষয়ের সে প্রতিনিধি, লাগাতার রক্তগঙ্গায় ভাসতে ভাসতে, অনবরত খাণ্ডবদাহন দেখতে দেখতে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগে, বাধার সমস্ত প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার বার্তা নিয়ে আসে। এই পোস্টমাস্টার একটি চরিত্র হলেও সে একটি কালের, সময়ের রূপক, মহাকালের বার্তাবাহক।

পরিচালক আবীর খান ও রাশেদ শামীম স্যাম জুটি নিজেদের প্রথম চলচ্চিত্রে একটি মুক্তধারার দিগন্তের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সুন্দর একটি দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে চলচ্চিত্রের সুন্দর স্বপ্নীল গল্পটি বুনেছেন ফেরদৌস আহমেদ।

সরকারি চাকরি করা পোস্টমাস্টার আরিফ মনে মনে ভাবেন বাঙালিদের ওপর দমন–পীড়ন চালানো পাকিস্তান সরকারের পোস্ট অফিসে আর যাবেন না। কিন্তু সে ঘরে বসে থাকলেও যে আর দেশ স্বাধীন হবে না। এই কর্মক্ষেত্রে এসেই নিজের নামে একটা চিঠি পান। বন্ধু সালাউদ্দিনের চিঠি। স্কুলজীবনের বন্ধু এই সালাউদ্দিনের সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন আরিফ। ফুটবল খেলায় গোল খেলে সালাউদ্দিনের মাথা ঠিক থাকত না। তিন তিনবার গোল খাওয়ার পর রেগে আগুন হয়ে বলে উঠতেন, এবার গোল খেলে মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেব! সেই সালাউদ্দিন এখন মাতৃমুক্তির পণে মুক্তিযোদ্ধা। আরিফের কাছে চিঠিতে লিখেছেন, যুদ্ধ ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই। যুবশক্তিকে একত্রিত করো। যুদ্ধে পাঠাও। আমরা শুধু শুধু পাকিস্তানিদের ভয় পাচ্ছি। আমরা যদি গর্জে উঠি তাহলে ’৫২, ’৬৬, ’৬৯ ও ’৭০-এর মতো ’৭১–ও আমাদের হবে।

সত্যিই তো! এভাবেই তো বাঙালি জেগে ওঠে । ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?/ তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!’ ছোটবেলা থেকে ভোরের বার্তা শুনে এভাবেই যে আমরা জেগে উঠেছি। বন্ধুর বার্তা আরিফকেও জাগিয়ে দেয়। নিজের ভেতরে অনেকটা চরাই-উৎরাই পেরিয়ে মনে মনে আরিফ প্রতিজ্ঞা করে, কবি নজরুলের ভাষায় ‘মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে/ উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে-/ অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না…’। দেশমাতৃকাকে শৃঙ্খল মুক্ত না করে আরিফ শান্ত হবে না। এই যুদ্ধে আরিফ প্রথমেই তার সহকারী ফরিদকে পাশে পেয়ে যায়।

ফরিদ আর ফরিদের বউ জোহরার ছোট্ট সংসার। তৃতীয় একজন আসতে চলেছে পৃথিবীতে। ফরিদও স্বপ্ন দেখে যে আসবে জোহরার গর্ভের সন্তান, সেও যেন স্বাধীন মুক্ত বাংলাদেশের মাটিতে আসে। জোহরা আরিফকে বাবা বলে ডাকে। আরিফের কাছেও ফরিদ আর জোহরা সন্তানতুল্য। এবার শুরু হয় আরিফের নিজের সংগ্রাম।

সরকারি কর্মচারীরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারে না। নেপথ্যে মুক্তির কারিগর, কান্ডারি তো হতে পারে। গ্রামের মধ্যেও গুলজারের রাজাকার বাহিনী নরেন ঘোষের মিষ্টির দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছে। হিন্দুরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম বাঙালি হয়ে যারা বাঁচে, বাঁচতে চায়, সকলের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে এসেছে। ঘরের মা-বোনেদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়েছে। হিন্দু না ওরা মুসলিম, ভেদাভেদ করার সময় তাই এখন নয়। কান্ডারি বলো, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।

পোস্টমাস্টার আড়াল থেকে গ্রামের সব যুবকের কাছে চিঠি পাঠাতে থাকে। সবাই যেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। যুদ্ধ ছাড়া মুক্তি নেই। পাকিস্তানিদের ভয় পাওয়ার দিন শেষ। ফরিদ হাতে হাতে চিঠি পৌঁছে দেয়। সবাই একত্রিত হয়ে আড়ালে পোস্টমাস্টারের সঙ্গে দেখা করে। আকাশবাণীর বার্তা শোনে।

রাজাকার গুলজার বলে, আকাশবাণী কলিকাতা শুনবে না। ওই মালাউনরা তো মিথ্যা ষড়যন্ত্র করছে। রেডিও পাকিস্তান শুনবে, ওখানে আসল খবর পাবে। গুলজার পোস্ট অফিসে এসে হাজির হয়। আরিফের সন্দেহজনক কাজকর্ম ধরার চেষ্টা করে। আরিফ বুদ্ধির জোরে বেঁচে যায়। পোস্ট অফিসে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে দিয়ে যায়। আরিফের চোখে স্বপ্নের বাংলাদেশের পতাকা পত পত করে ওড়ে। পাকিস্তানের পতাকা সড়িয়ে আরিফ সেই পতাকা টাঙায়।

সবুজের মতো গ্রামের যুবকেরা গ্রাম্য প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম থেকে বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আরিফের ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়। যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত হয়। সবাই জানে এবং বুঝতে শিখে গেছে, কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়, ‘যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা/ যুদ্ধ মানেই আমার প্রতি তোমার অবহেলা’। কিন্তু এই নিশ্চিত মৃত্যু অথবা মুক্তি ছাড়া যে আজ আর কোনো পথ খোলা নেই। পরাধীন দেশের কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মরার চাইতে মৃত্যুই ভালো।

দেবরের ঘরে, জ্বরে গা পুড়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে দেখতে এসে এবার গোলাপ চিনতে পারে। উন্মোচিত হয় স্মৃতির পাতায় মুছে যাওয়া অধ্যায়। আরিফ যে ছিল তার পূর্বপ্রেমিক। দুজনে ভালোবেসেছিল, কাছে এসেছিল, প্রেমের ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল। আরিফও হঠাৎ দেখে অবাক হয়। গোলাপকে চিনতে পারে।

প্রেমিকার হাত ছেড়ে দিয়ে, ঘরে বউ সন্তান ফেলে রেখে সকলে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে যায়। কারও কারও সহধর্মিনীও যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত। পেয়ারী বেগমের চিঠিতে প্রাণপ্রিয় বন্ধুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রমজানের মতো ডাকাতও দেশের জন্য অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত হয়। পোস্টমাস্টার সকলের বুকের ভেতরে জমে থাকা পাকিস্তান সরকারের দীর্ঘদিনের অবহেলা, অনাদর, বঞ্চনার প্রতিবাদে তেতে ওঠা রাগ–ক্ষোভ–যন্ত্রণা অশ্রু নিংড়ে দেশের মানচিত্র জাগিয়ে দেয়। নিজের মান রাখতে আজ এই মানচিত্র দরকার।একসময় গুলজারের কাছে পোস্টমাস্টারের চিঠি চালাচালি ফাঁস হয়ে যায়। পোস্ট অফিস আক্রমণ করে বাংলাদেশের ওড়ানো পতাকা ফেলে দেয়। পোস্টমাস্টার আরিফ, ফরিদকে নিয়ে নিজেও এবার যুদ্ধে চলে যায়। গর্ভবতী জোহরাসহ গ্রামের সব যুবতীদের ধরে ধরে গুলজার পাকিস্তানীদের ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।

আরিফ আর ফরিদ ভিন্ন গাঁয়ে এক বুড়ি মায়ের বাড়িতে গিয়ে রাতে আশ্রয় নেয়। সেই বুড়ি মায়ের নাতনিকেও পাকিস্তানী সেনারা তুলে নিয়ে গেছে। ক্ষুধার্ত দুই সন্তান আরিফ আর ফরিদকে পরম আদর যত্নে তিনি রান্না করে খেতে দেন। দুই মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে পাকিস্তানিরা এসে ঘর জ্বালিয়ে দিতে পারে। কিন্তু মা অবিচল। আজকে হলেও তিনি মরবেন, কালকে হলেও মরবেন। নরপশুদের হাত থেকে দেশটা তো মুক্তি পাক। বুড়ি মায়ের চরিত্রে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দিলারা জামান অনন্য, অসাধারণ। ডান হাতে তার খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ। দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র যেন আগুনবরণ। খাওয়া শেষে নিজের আঁচল দিয়ে সন্তানের হাত মুছে দেওয়া, আমাদের বাঙালি জাতিকে চিনতে শেখায়।
আরিফ, ফরিদ, সবুজ সকলে যুদ্ধ অস্ত্র শিক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখন আর কোনো আড়াল নেই। সম্মুখে বিস্তীর্ণ প্রান্তর, মুক্তি অথবা মৃত্যু। দলবদল নিয়ে একের পর এক আক্রমণ। নিজের গ্রামে ফিরে আসে গেরিলা যোদ্ধারা। সবুজ ধরা পড়ে। অকথ্য নির্যাতনেও মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না। আরিফেরা সেনা ক্যাম্প দখল নেয়। দেখতে পায় গুলজার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন। গর্ভবতী জহুরাকেও ধর্ষণ করে ওরা মেরে ফেলেছে। ধর্ষিতা আয়েশা ভাবি আরিফের চিঠি পড়া শুনতে শুনতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সবুজ, রমজান ডাকাত দেশের জন্য প্রাণ দেয়। বেঁচে থাকা নির্যাতিতাদের উদ্ধার করা হয়।

এবার গেরিলারা ভিন্ন জায়গায় যাবে। মুক্তিযোদ্ধাদের চরম শোকেও ভেঙে পড়লে চলে না। জহুরা এবং গর্ভের অনাগত সন্তানের চরম মৃত্যু শোক নিয়েও ফরিদকে পরবর্তী যুদ্ধে যেতে হয়। সে যুদ্ধে আরিফকে বাঁচাতে গিয়ে ফরিদ নিজেও প্রাণ দেয়। প্রিয়জনের লাশের পর লাশের স্তূপ পেরিয়ে, এ যেন এক অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকারের দিকে যাত্রা। এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়। এ জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ নয়। কিন্তু যখন জানি মৃত্যু ভালোবাসা ছাড়া কিছু নয়, পথ চলা থামালে যে চলবে না। কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের ভাষায়, ‘আমাকে হত্যা করলে/ বাংলার সব কটি মাটির প্রদীপে শিখা হয়ে ছড়িয়ে যাব/ আমার বিনাশ নেই—/ বছর বছর মাটির মধ্য হতে সবুজ আশ্বাস হয়ে ফিরে আসব/ আমার বিনাশ নেই—/ সুখে থাকব, দুঃখে থাকব সন্তান—জন্মে সৎকারে/ বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন/ মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন।’

পোস্টমাস্টারকেও তাই থেমে থাকলে চলবে না। বার্তা দিতে এসে আরিফও বার্তা হয়। যুদ্ধের ময়দানে আহত হয়। এবার সে সহযোদ্ধার হাত ধরে এসে পড়ে ফুলঝুড়ি গ্রামে গোলাপজানের বাড়িতে। গোলাপজানের স্বামী রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ধরে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেয়, হত্যা করে। কিন্তু গোলাপজানের দেবর আরিফের সহযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষের প্রতিনিধি। গোলাপও সুযোগ পেলেই যুদ্ধে চলে যেত।

দেবরের ঘরে, জ্বরে গা পুড়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে দেখতে এসে এবার গোলাপ চিনতে পারে। উন্মোচিত হয় স্মৃতির পাতায় মুছে যাওয়া অধ্যায়। আরিফ যে ছিল তার পূর্বপ্রেমিক। দুজনে ভালোবেসেছিল, কাছে এসেছিল, প্রেমের ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল। আরিফও হঠাৎ দেখে অবাক হয়। গোলাপকে চিনতে পারে। এই মেঘ, এই গোলাপ যে আরিফের অলিখিত কবিতা। কবি মহাদেব সাহার ভাষায়, ‘যখন একজন বিপ্লবীর দিকে তাকাই, দেখি দুচোখে মায়াকোভস্কির স্বপ্ন/ আর্ত স্বদেশের দিকে তাকিয়ে আমিও নেরুদার কথাই ভাবি/ কেউ জানে না একটি ফুলের মৃত্যু দেখে, একটি পাখির ক্রন্দন দেখে/ আমারও হৃদয় পৃথিবীর আহত কবিদের মতোই হাহাকার করে ওঠে।’ আরিফও এই ফুল দেখে অসহায় প্রেমিকের মতোই পরাজিত। কিন্তু কী করে প্রকাশ করবে আজ, এইসব মেঘ দেখার দুঃখ, এইসব গোলাপ দেখার ব্যাকুলতা। আকাশে এখনো যে মেঘের ঘনঘটা। তীরে এসে ভেড়েনি যে তরী। তার ছিঁড়ে গেছে সেই কতকাল আগে। গোলাপের পরিবারের বাঁধায় ওদের ছাড়াছাড়ি হয়েছিল। যুদ্ধের ময়দানে আজ দেখা হয়ে গেল আবার।

ঘটনার পরিক্রমায় গোলাপজান রাজাকার স্বামীকে হত্যা করে। আরিফদের তালাবন্দী ঘর থেকে মুক্ত করে। আর পোস্টমাস্টার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে মুক্তির ডাকে।
পথ বেঁধে দেবে বন্ধনহীন গ্রন্থি। ওরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী। হাতে পত পত করে উড়বে সবুজের বুকে লাল টুকটুকে সূর্য ওঠা বিজয় পতাকা।

এই চলচ্চিত্রের কাহিনিকার ফেরদৌস আহমেদ। পোস্টমাস্টার চরিত্রে ফেরদৌস, গোলাপজান চরিত্রে মৌসুমী অপরাজেয়। চলচ্চিত্রের সংলাপ লিখেছেন মমর রুবেল। অসাধারণ গানগুলোর কণ্ঠে কুমার বিশ্বজিৎ, সাহিনা এবং সারগাম ফাইভ ব্যান্ড। গানের কথা লিখেছেন কবীর বকুল, রাশেদ শামীম। সুর ও সংগীত পরিচালনা ইমন সাহা। অমিত হাসান, আল মনসুর, শহিদুল আলম সাচ্চু, নিঝুম রুবিনা, সানজিদ খান প্রিন্স, অভি—সবার অভিনয় ভালো। রাজাকার গুলজার চরিত্রের প্রতিটি সংলাপ উচ্চারণ আলাদা করে মনে ধরে। বাসুর শিল্প নির্দেশনা ভালো। জেড এইচ মিন্টুর চিত্রগ্রহণও সুন্দর। নবীন দুই পরিচালক প্রথম চলচ্চিত্রে আশার পথ খুলে দিয়েছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত এই চলচ্চিত্র উৎসর্গ করা হয়েছে, সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। যে মুক্তিযোদ্ধারা একটি ফুলকে বাঁচাবেন বলে অস্ত্র ধরেছিলেন। যে মুক্তিযোদ্ধারা ফুল হয়ে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিদিন ফোটেন।

হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত