জোবরা গ্রামের বিকেল

মাছ ধরার দৃশ্য, প্রতীকীছবি: এম সাদেক

বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাসে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। রাতভর বৃষ্টিতে চারপাশ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে আছে। গত রাতের প্রবল বর্ষণের ছাপ চারদিকে। প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রাম শহর ডুবলেও ডুবে না হাটহাজারীর জোবরা গ্রাম।

এ গ্রামেরই বাসিন্দা আমরা। পাহাড়ের কোলঘেঁষা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস। ভোররাতে আজানের ধ্বনির আগে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙেছিল। বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত। এমন দিনে রোদ নেই, ঘড়ি না দেখলে বোঝার উপায় নেই সকাল না দুপুর।

যা–ই হোক, দিনভর গৃহবন্দী থাকার বিকেলে দক্ষিণ ক্যাম্পাস ঘুরে, স্টেশনসংলগ্ন দোকানে মজা করে হালুয়া রুটি খেয়েছি। স্টেশন ধরে ফতেয়াবাদের দিকে হেঁটে চলছি। উপলক্ষ নিরিবিলি পরিবেশে দুই পাশের ধানখেতে জমা পানি, আর রেলওয়ে ব্রিজ–সংলগ্ন এলাকায় মাছ ধরার দৃশ্য দেখব। দুই বন্ধু হাঁটছি আর গুনগুনিয়ে গান গাইছি। মাঝপথে একদল মানুষের পরোক্ষ গাঁজার ঘ্রাণ আমাদের নাক ছুঁয়েছে। গাঁজায় বুদ হওয়ার জন্য তারাও প্রকৃতিকে বেছে নিয়েছে হয়তো...।

রেলওয়ে ব্রিজে এসে লেপটে বসে পড়েছি। ঝাঁকি জালের শব্দ কানে অন্য রকম সুর ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করছে। গত রাতের বৃষ্টিতে পুকুর ডুবেছে। তাই তাদের মৎস্য উৎসব। পুঁটি, কাতলসহ নানা মাছ জালে ধরা পড়ছে। বহুদিন ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখি না। আমি নিজে মাছ ধরতে না নামলেও তাদের উৎসবের আনন্দ লুফে নিচ্ছি। আকাশে চিল সতর্ক টহল বসিয়েছে। মাঝেমধ্যে নিচে ঝাপটি মারছে। এদিকে পানির বয়ে চলার কলকল ধ্বনি শ্রবণযন্ত্রকে ফাঁকি দিতে পারেনি। আমাদের মতো আরও কয়েকজন মাছ ধরার দৃশ্য দেখছে।

ভরা বর্ষায় আমাদের গ্রামবাংলার দৃশ্য এমনই ছিল। বৃষ্টির পর সবাই মাছের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ত। পানি নামার স্থানগুলো ছিল মাছ ধরার সেরা জায়গা। যাঁরা মাছ ধরছেন, তাঁরা এ জোবরা গ্রামেরই মানুষ। এদিকে আলো কমে আসছে, ব্যাঙের ডাক কানে বাজতেছে। তাদেরও আজ উৎসব চলছে। মাছ ধরা দেখতে দেখতে কৈশোরের দিনগুলো ভাবছিলাম। আর ফিরবে না সোনায় মোড়ানো সেই সব দিন।

এদিকে সন্ধে গড়াতেই ভেসে এল স্রষ্টার অমর বাণী। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার...আজান শেষ হতেই রেললাইনের অপর পাশের হিন্দুপাড়া থেকে বাজতে লাগল মন্দিরের ঘণ্টা আর শঙ্খধ্বনি। ধর্মবিশ্বাস ভিন্ন হলেও দিনের সমাপ্তিতে তারা স্রষ্টার আরাধনায় মত্ত। এ আমাদের গ্রাম, আমাদের বাংলাদেশ, আমাদের সম্প্রীতির চিহ্ন।

কার্যনির্বাহী সদস্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা